Medinipur election : জয় নিশ্চিত ধরে নিয়েই প্রতিটি ওয়ার্ডেই ব্যান্ড পার্টি ও দেদার সবুজ আবির বুকিং তৃণমূলের
মেদিনীপুর: মেদিনীপুর বিধানসভা ও নির্বাচনের ফলাফলে শাসক দল তৃণমূল অনেকটাই আশাবাদী। দলের জেলা নেতৃত্বরা সেভাবে মুখ না খুললেও নিচু তলার কর্মীরা তাদের নিজস্ব গ্রাউন্ড রিপোর্ট তৈরি করার পর সেলিব্রেশন এর প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে ২৫ টি ওয়ার্ডেই। অতি উৎসাহী কর্মীরা ইতিমধ্যেই প্রতিটি ওয়ার্ডেই ব্যান্ড তাসা পার্টি ও কয়েক কুইন্টাল সবুজ আবির বুকিং করে ফেলেছে। যদিও এই প্রসঙ্গে তৃণমূল প্রার্থী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার সহস্য মন্তব্য-” এই প্রসঙ্গে আমি কিছু বলতে পারব না। অতি উৎসাহীরা যদি করে থাকে সেটা তাদের ব্যাপার। তবে তারা গ্রাউন্ডে শুরু থেকেই কাজ করেছে।”
মেদিনীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনে ফলাফল কোন দিকে যাবে তা নিয়ে রাজনৈতিক জল্পনাতে প্রতিদিনই মেদিনীপুর শহর ও সংলগ্ন এলাকার চায়ের দোকানগুলোতে সরগরম পরিস্থিতি। প্রধান সামনে থাকা দুই রাজনৈতিক দল তৃণমূল ও বিজেপি নিজেদের ওয়ার রুমে তা নিয়ে ভোটের আজও কাটা ছেঁড়া করে চলেছে। বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি ব্যবধান থাকবে। তবে তৃণমূলের হিসাব তার তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে।
মেদিনীপুর বিধানসভা ও নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী সুজয় হাজরার রাজনৈতিক গুরু হিসেবে যিনি পরিচিত, সেই খড়গপুর গ্রামীণের বিধায়ক দিনেন রায় বলেন- “পার্থক্যটা ৩০ হাজারের বেশি থাকবে। জয় নিশ্চিত এটা আমরা বাদ দিলেও সকলেই জেনে গিয়েছেন। প্রশ্ন পার্থক্য থাকাটা নিয়ে। এই পার্থক্যটা কুড়ি হাজারের বেশি থাকবে আমরা নিশ্চিত।”তবে এই প্রসঙ্গে সুজয় হাজরা অবশ্য কোন মন্তব্য করতে চাননি। জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসের হাসি তার মুখেও দেখা গিয়েছে।
তবে দলের নেতাদের নির্দেশের অপেক্ষা করেনি নিচু তলার অতি উৎসাহী যুবকর্মীরা। দলের প্রার্থী জয়ী হচ্ছেন এমন ধরে নিয়েই ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে মেদিনীপুর পৌর এলাকার ২৫টি ওয়ার্ডেতেই। মেদিনীপুর পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা তৃণমূল নেতা ইন্দ্রজিৎ পানিগ্রাহী বলেন-” আমাদের স্থানীয় তৃণমূলের কর্মীরা আমাদের বলার আগেই ব্যান্ড ও তাসা পার্টির বুক করে ফেলেছে। বারোটি তাসা ও আরও বাদ্যযন্ত্র রয়েছে তার আনুষাঙ্গিক হিসেবে। অনেকটা সবুজ আবিরও তারা বুক করে ফেলেছে। আমাদের না জিজ্ঞেস করে অতি উৎসাহী কর্মীরা এটা করেছে। তার কারণ তারা নিশ্চিত জয় হচ্ছেই।” ইন্দ্রজিৎ এর দাবি-” মেদিনীপুরের প্রতিটি ওয়ার্ডে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে উৎসবের মেজাজে ভোট গণনার দিনটিকে কাটানোর একটা প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ সকলেই নিশ্চিত।”
বিজেপি শিবিরের মধ্যে যেমন কাটা ছেঁড়া চলছে নিজেদের ভোট অংক নিয়ে, তেমনি তৃণমূলের মেদিনীপুর বিধানসভার দায়িত্বে থাকা নেতাকর্মীদের মধ্যেও একই রকম কাটাছেঁড়া অব্যাহত। তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে জয় নয়, ব্যবধান কতটা থাকতে পারে তা নিয়েই মতপার্থক্য। উল্লেখ করা যায় এই বিধানসভাতে ২০১৬ সালে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মৃগেন মাইতি ১ লক্ষ ৬ হাজার ৭৭৪ ভোট পেয়েছিলেন ৷ নিকটতম প্রার্থী ছিলেন সিপিআইএর সন্তোষ রানা ৷ তিনি পেয়েছিলেন ৭৩ হাজার ৭৮৭ ভোট ৷ মৃগেন মাইতি সেবার জয়ী হয়েছিলেন ৩২ হাজার ৯৮৭ ভোটে ৷
পরে ২০২১ সালে নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছিলেন জুন মালিয়া ৷ সেবার তিনি ভোট পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ২১ হাজার ১৭৫ ভোট ৷ সেবার বাম প্রার্থীকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছিল বিজেপি প্রার্থী ৷ বিজেপি প্রার্থী হিসেবে সমিত কুমার দাস পেয়েছিলেন – ৯৬ হাজার ৭৭৮ ভোট ৷ তাই তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া ২৪ হাজার ৩৯৭ ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন ৷ ফলে তৃণমূলের ব্যাবধান কমেছিল ২০১৬ এর তুলনায় ২০২১ এ ৮ হাজার ৫৯০ ভোটের ৷
এরপর ফের লোকসভা নির্বাচনের লড়াই হয় ২০২৪ ৷ একইভাবে জুন মালিয়া বিধায়ক পদ থেকে সরে লড়াই করেন লোকসভার জন্য জয়ী হয়েছেন ৷ সেবার এই মেদিনীপুর বিধানসভার হিসেবে দেখা গিয়েছে মেদিনীপুর বিধানসভা আসনে তৃণমূল পেয়েছে ১ লক্ষ ৯ হাজার ৯২৬ ভোট ৷ বিজেপি পেয়েছে ১ লক্ষ ৭ হাজার ৭৫৬ ভোট৷ ফলে তৃণমূলের ব্যাবধান আরও কমে দাঁড়ালো ২ হাজার ১৭০ এ ৷ তবে এতে তৃণমূলের দাবি- লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপট আলাদা ৷ ফলে সেখানে এই ব্যবধান মাথা ব্যাথার কারন নয় ৷ আমরা দেখিয়ে দেবো এই বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলে ৷