মেদিনীপুর: এযাবৎকালের নিজেদের তৈরি রেকর্ড নিজেই ভাঙলেন তৃণমূল প্রার্থী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। মেদিনীপুর বিধানসভা ও নির্বাচনে, এতদিন তৃণমূল প্রার্থী সর্বাধিক যে ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন, শনিবারের ২০২৪ বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলে সেই পুরনো ব্যবধান এর রেকর্ড ভেঙে সর্বাধিক রেকর্ড তৈরি করলেন তিনি। এর আগে মেদিনীপুর বিধানসভার নির্বাচনে সর্বাধিক ছিল ২০১৬ সালে তৃণমূল বিধায়ক মৃগেন মাইতি ৩২ হাজার ৯৮৭ ভোটে জিতেছিলেন। সেই সমস্তকে ছাপিয়ে সুজয় হাজরা এবার জয় লাভ করলেন ৩৩ হাজার ৯৯৬ ভোটে। তুলনামূলকভাবে কংগ্রেস যেমন একেবারেই ভোট খারাপ করেছে। আরো একইভাবে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে বামেরা। কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছেন ৩৬৩৩ ভোট, সিপিআই প্রার্থী পেয়েছেন ১১ হাজার ৩৯ ভোট।
মেদিনীপুর বিধানসভা ও নির্বাচনে এতটা ভালো ফল হবে আশা করতে পারেনি শাসক দল তৃণমূল নিজেরাও। ফলাফল ঘোষণার পর শনিবার তিনটের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যায় মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের কোন এলাকার ভোটাররা কত ভোট দিয়েছেন। সামগ্রিকভাবে প্রথমেই ধরা পড়ে সর্বাগ্রে যেখানে গণনা শুরু হয়েছিল, জঙ্গল মহলের শালবনি এলাকা থেকে ১৩ হাজার ভোটে এগিয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থী সুজয় হাজরা। এরপরে শুরু হয় মেদিনীপুর সদর ব্লক ও মেদিনীপুর শহরতল্লাট। মেদিনীপুর সদরে ব্যবধান তৈরি করে দেয় আট হাজার। মেদিনীপুর সদরে প্রায় আট হাজার ভোটে এগিয়ে যান তৃণমূল প্রার্থী। মেদিনীপুর শহরে প্রায় দশ হাজার ভোটে এগিয়ে যান তৃণমূল প্রার্থী। সব মিলিয়ে পোস্টাল ব্যালট ও অন্যান্য হিসেবে পর ধরা পড়েছে-তৃণমূল প্রার্থী ৩৩৯৯৬ ভোটে জয়ী হয়েছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী শুভজিৎ রায় এর তুলনায়।
২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সি পি আই এর সন্তোষ রানা। তার থেকে ২৮ হাজার ২২০ ভোটে এগিয়ে জয়ী হয়েছিলেন মৃগেন মাইতি। ২০১৬ সালে সেই মৃগেন মাইতির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি সেই একইভাবে সন্তোষ রানা ছিলেন। তার থেকে ৩২ হাজার ৯৮৭ ভোটে এগিয়ে গিয়েছিলেন মৃগেন মাইতি। এটা ছিল সর্বাধিক রেকর্ড। ২০২১ সালে জুন মালিয়া এই বিধানসভা তেই লড়াই করে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিজেপি প্রার্থী সমিত দাস এর থেকে ২৪ হাজার ৩৯৭ ভোটে এগিয়ে গিয়েছিলেন। এবারে বাম প্রার্থী তৃতীয় স্থানে পৌঁছে গিয়েছিলেন।
২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের সময় বিধানসভার মেডিকেল হিসাব করে দেখা যায় মেদিনীপুর বিধানসভা তে তৃণমূল প্রার্থী ২১৭০ ভোটে মাত্র এগিয়ে রয়েছে। এবার সেই সমস্ত ছাপিয়ে তৃণমূল প্রার্থী প্রায় ৩৪ হাজার ভোটে জয়ী হলেন। এবার কংগ্রেস প্রার্থী শ্যামল কুমার ঘোষ ভোট পেয়েছে মাত্র ৩৬৩৩ টি, সিপিআই প্রার্থী মণিকুন্তল খামরই পেয়েছেন ১১ হাজার৩৯টি। ফলে তৃণমূল নিজেদের রেকর্ড নিজেরাই ভেঙেছে, জয়ের ক্ষেত্রে। ক্রমশই তলানিতে নেমে গিয়েছে কংগ্রেস ও বামেরা।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল প্রার্থী সুজয় হাজরা বলেন-” নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে বিরোধীরা এত বেশি ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন, এটা মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। যার ফলে ওদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মানুষ নিজের ভালোটা চায়। তাই নিজেদের স্বার্থেই নেত্রীকে পছন্দ করেছেন তারা।”তাতে তাল মিলিয়ে তৃণমূলের রাজ্য নেতা মানস রঞ্জন ভূঁইয়া বলেন-” বিরোধীরা এখনো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিনতেই পারল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের মনের মধ্যে রয়েছে। তাই যত চেঁচামেচি করবে ওরা, তত ভোট বাড়বে তৃণমূলের।”