Theft : তিনমাস ধরে ব্যাঙ্ক দোকান বাড়িতে লাগাতার চুরি, গুড়গুড়িপাল পুলিশের হাতে সামগ্রী সহ ধরা পড়লো দুই “ভদ্র” চোর

গুড়গুড়িপাল : টানা তিন মাস ধরে মেদিনীপুর সদরের গুড়গুড়িপাল থানার অন্তর্গত ব্যাংক, সমবায়, দোকান, বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটছিল। সিসিটিভিতে চোরেদের ফুটেজ ধরা পড়লেও চিহ্নিত করা মুশকিল হয়ে পড়ছিল। কারণ আপাদ মস্তক ঢাকা ছিল চেহারা। মুখেও মাস্ক দিয়ে ঢাকা। লাগাতার চুরিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছিল পুলিশ। শেষমেষ চোরের সাত দিন গৃহস্থের একদিন! দুই চোরকে দুটি স্থান থেকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার চুরির বিভিন্ন সামগ্রীও। তবে যারা ধরা পড়লো তারা কেউই পুরনো প্রফেশনাল চোর নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা, নেই কোন নেশাও। এলাকায় খুবই ভদ্র বলেই পরিচিত ছিল তারা। তাদের ধরা পড়ার পর স্তম্ভিত এলাকার লোকজনও। আপাতত ২ ভদ্র চোরকে গ্রেফতার করে বাকিদের সন্ধানে নেমেছে পুলিশ। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুই চোরের দেখানো স্থানী থেকে উদ্ধাপ বিপুল সামগ্রী ৷
অন্যান্য বেশ কয়েকটি জায়গায় চুরির পর গত ২৮ শে সেপ্টেম্বর চুরির ঘটনা ঘটেছিল মেদিনীপুর সদরের কঙ্কাবতী এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। ব্যাংকের দরজার লক কেটে ঢুকে সিসিটিভিতে ছবি যাতে না আসে তেমন ব্যবস্থা করে চুরি করতে ঢুকেছিল চোরের দল। আপাদমস্তক পোশাকে ঢাকা চোরেদের মুখে কালো রঙের ভুতুড়ে মাস্ক লাগানো ছিল। ভেতরে প্রবেশ করেই তারা আলো বন্ধ করে দিয়েছিল ব্যাংকের। ভেবেছিল সিসিটিভি অতটা ভালো করে চিনতে পারবে না।ব্যাঙ্কের ভেতরে বেশ কিছুক্ষণ ধরে চেষ্টা করেছিল টাকার ভল্ট কাটার। কিন্তু তা কাটতে না পেরে বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙ্গার পর সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল চোরের দল। পুলিশ তদন্তে নেমে চোরেদের চিহ্নিত করতেই পারছিল না পোশাকে ও মাস্কে ঢাকা থাকার কারণে।

এমন ভাবে গত তিন মাসে ফের এনায়েতপুর এলাকার একটি সমবায় ব্যাংকেও চুরির চেষ্টা হয়। শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি চোরের দল। এরপর চাঁদড়া থেকে এনায়েতপুর বিভিন্ন এলাকাতে পরপর বিভিন্ন দোকান ও বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে একইভাবে। পুলিশের কাছে সবাই জানিয়েছিল চুরির বিষয়ে। পুলিশ বিভিন্ন জায়গাতেই সিসিটিভি ফুটেজে একই রকম চোরদের অস্তিত্ব দেখতে পাচ্ছিল। কিন্তু সম্ভব হয়নি চিহ্নিত করা। অবশেষে পুজোর সময় সকলেই যখন আনন্দে ব্যস্ত সেই সময়ই নিজেদের কাজ হাসিল করে ফেললেন সার্কেল ইন্সপেক্টর নন্দন মন্ডল ও গুড়গুড়িপাল থানার ওসি । গুড়গুড়িপাল থানার অন্তর্গত রেড়াপাল এলাকায় হানা দিয়ে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে প্রথমে বুধবার রাতে। নেপাল ঘোষ নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করে অপর সঙ্গী ওই এলাকার শশীমোহন ঘোষ এর বিষয়ে জানতে পারে। শশীমোহন ততক্ষণে বাঁকুড়ার বারিকুলে নিজের শশুর বাড়িতে ছিল। পুলিশ সোজা সেখানে হাজির হয়ে রাতেই শ্বশুরবাড়ি থেকেই তুলে আনে তাকে। দুই চোরকে গ্রেপ্তার করে তাদের বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রেড়াপালে গিয়ে পুলিশ চোরেদের দেখানো স্থান থেকে চুরি করতে ব্যবহার করা সামগ্রী যন্ত্রাংশ, বিভিন্ন দোকানের চুরি যাওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার করেছে।
দুই চোরকেই গ্রেফতার করে মেদিনীপুর আদালতে তোলা হয়েছে বৃহস্পতিবার দুপুরে। গত তিন মাস ধরে বিভিন্ন রকমের দোকান, বাড়ি ব্যাংক চুরির ঘটনা ঘটেছিল। ৫ জন এই চুরির কাণ্ডগুলিতে রয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। দুজন গ্রেপ্তার হওয়ায় বাকিদের খোঁজে অভিযান জারি রেখেছে পুলিশ। ফলে তিন মাস ধরে যে চুরি চলছিল পরপর তাতে কিছুটা স্বস্তি বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রেড়াপালের বাসিন্দারা জানিয়েছেন- ধরা পড়া ও ফেরার থাকা যুবকেরা কেউ রাজমিস্ত্রি , কেউ বা ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি, কেউ ট্রাক্টর চালক ৷ কেউই নেশায় আসক্ত যুবক নয় ৷ এলাকাতে অতি ভদ্র বলেই জানতেন বাসিন্দারা ৷ তাই অনেকেই মনে করছেন- অল্প সময়ে মোটা টাকা অর্জনের নেশাতেই এই চুরিতে হয়তো প্রবেশ করেছিল তারা ৷ তবে – সবটাই ক্ষতিয়ে দেখতে শুরু করেছে পুলিশ ৷ পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার জানিয়েছে- “চোর ধরা হয়েছে, সব ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷ বাকিরাও ধরা পড়বে শীঘ্রই ৷”