Suvendu Adhikari : “ভোটের দিন তিনস্থানে আমার লোক জমায়েত থাকবে”, তৃণমূল ও পুলিশকে বড়ো হুশিয়ারী শুভেন্দু অধিকারী-র

মেদিনীপুর: ভোটের আগে মেদিনীপুর শহরে বিজেপি প্রার্থী শুভজিত রায়ের সমর্থনে প্রচারে হাজির হলেন রাজ্যের বিরোধীদল নেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ মেদিনীপুর শহরের সিপাইবাজার এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে প্রথমে সাংবাদিক সম্মেলন করে সেখান থেকে পতযাত্রা শুরু করেন ৷ রাস্তায় ঘুরে লিফলেট বিলি করে প্রচার করলেন বিজেপি প্রার্থী শুভজিত রায়ের সমর্থনে ৷ চরম হুশিয়ারি দিলেন ভোটর দিনে পুলিশ বা শাসক দলের কোনো রকমের চাপ হলে ৷ জানালেন-এখানে ভোটের দিনে কোনো বিজেপি কর্মীর গায়ে হাত পড়লে জেলার চন্দ্রকোনা রোড, ডেবরা ও খড়্গপুরে জাতীয় সড়কে মজুদ থাকবেন বিজেপি কর্মীরা ৷ অবরোধ করে দেওয়া হবে জাতীয় সড়ক ৷
শুভেন্দু অধিকারীর রেলি অনুমতি বাতিলের প্রসঙ্গে এদিন তিনি বলেন-” ধৃতিমান সরকার আছে আমার তো বাতিল হবে। গরু বালির টাকা তোলে ওই লোকটা। ভেবেছিল আমি আসতে পারবো না। এখানকার প্রতিটা লোক আমাকে চেনে আমি এখানকার ভূমিপুত্র। ও যে আমার অনুমতি বাতিল করবে সেটা আমি আমাদের দলের লোককে আগেই বলেছিলাম। এই শহরে আমি যেখানে ইচ্ছা আসতে পারি। এটা সনাতনীদের শহর হিন্দুত্বের শহর। এই পুলিশ সুপার ধৃতিমান খুবই নোংরা লোক। ঝাড়খন্ডের রাস্তা দিয়ে গরু পাচার করে, ৬০০ মত বালি খাদান থেকে বালি পাচার হয়। এখানকার আই সি ওসিরাও নানান নোংরামিতে মত্ত। পরকীয়াতে জড়িত তারা। তবে বেশিদিন লাগবে না। ১৪ /১৫ মাস মাত্র আর বাকি। ২০২৬-এ তুলে ফেলে দেবো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে তৃণমূলকে শেষ করেছি। এবার রাজ্য থেকে সরিয়ে দেবো। এই জায়গা আমার। আমি এখানকার আত্মীয়।”

ফিরহাদ হাকিমের সম্প্রতি করা মন্তব্য ইসুতে বিভিন্ন রকম তির্যক মন্তব্য করেছেন শুভেন্দু অধিকারী এদিন। রেখা পাত্রের উদ্দেশ্যে ফিরহাদ হাকিমের করা মন্তব্য নিয়ে তিনি বলেন ” রেখা পাত্রকে মাল বলেছে। মহিলারা বিষয়টা দেখুন। মহিলাদের ভাতা ভিক্ষার কাছে আত্মসমর্পণ করবেন? না ডাক্তার বোনের আরজি করের ঘটনার হিসাব নেবেন? এটা তো ওদের অভ্যাসেই আছে। গনিমতের মাল বলে মহিলাদের। এই চরিত্রের লোক ফিরহাদ হাকিমরা। অন্য রাজ্যে হলে এতক্ষণ কোমরে দড়ি দিয়ে ঢুকিয়ে দিত পেটাতে পেটাতে। একাধিক থানাতে মামলা হয়েছে। সিডিউল কাস্ট কমিশনেও কমপ্লেন হয়েছে। এরপর পুলিশ নিষ্ক্রিয় হলে মহিলাদের নিয়ে আদালতের আশ্রয় নেব। এরা বসিরহাটের রেখা পাত্র হেরো -তারপরের ভাষা হয়ে থাকে, তালে নন্দীগ্রামের হেরো কি? “
সম্প্রতি আবাস দুর্নীতি ইস্যুতে উচ্চ আদালতে ভুল একাউন্টে টাকা দেওয়ার বিষয়ে যা উত্থাপিত হয়েছে সেই প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন-“বিডিওর একাউন্টে আবাসের টাকা গিয়েছে। কিছু বিডিও রয়েছে যারা ফাঁকা খাতা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। গত চার বছরে ওবিসি কোটাতে পেয়েছেন। এই বিডিও মালগুলো একশো দিনের কাজের টাকা ঝেড়েছে। “
আরজিকর কান্ডের সম্পতি গ্লাভস নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এখানে নতুন ডাক্তারদের সংগঠন প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন-” জুনিয়র ডাক্তারদের নতুন কোন সংগঠন নেই। যেটা আছে সেটা তৃণমূলের সংগঠন। এরা অধিকাংশ লোকই ভূয়ো ডাক্তার। “
মেদিনীপুরের ভোটের সম্ভাব্য ফলাফল প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন-” ভোট দিতে পারলে কোন সনাতনী জনজাতি কুড়মী সমাজ, কেউ ভোট দিতে পারলে তৃণমূলকে ভোট দেবে না। কারণ যেভাবে দুর্গামূর্তি ভেঙেছে, আরজি করের ঘটনা ঘটেছে। তবে সংখ্যালঘুদের কথা বলবো না। কারণ তারা বিজেপিকে হিন্দুত্ববাদী দল বলে মনে করে। তারা মোদিজীর রেশন নেবে, শৌচালয় নেবে, আবাস নেবে , মোদিজীর ভ্যাকসিন নেবে, আর এলাকায় বিজেপি ঢুকলেই বলবে জয় শ্রীরাম আয়া হে। আর বাকি সময় বলবে “হামারা অধিকার হে” তাই ওদের কথা আমি বলতে পারবো না। দিলে ভালো। ওদের শিক্ষিত লোকেরা দিলে আমরা কৃতার্থ। তবে আমরা আশা করি না। তবে বাকি সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারবে কিনা আমি জানিনা! বহু জায়গাতে হিন্দুদের ভোট দিতে দেয় না আমি দেখেছি। কারণ এরা হিন্দুদের বিশ্বাস করে না। এই আসনে লোকসভা নির্বাচন আজকে হলে আমরা আজকে জিতবো। কিভাবে জিতেছে এরা সেটা সকলেই জানে। এখানকার অনেক বিজেপি নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিজেপির জেলা সভাপতিকে হোটেলে তালা লাগিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল। এই ধরনের নোংরামো এখানকার পুলিশ করে। অতএব আগামী ১২ এবং ১৩ তারিখ পুলিশ কি করবে তা আমার জানা নেই। আবার ভোটের দিন কিছু করতে না পারলে ২৩ নভেম্বর গণনার দিন কি করবেন তাও আমার জানা নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের টিকে আছেন তন্ত্রের জন্য।, লোকতন্ত্রের জন্য নয়।”
এই প্রসঙ্গে একটি বড় পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন শুভেন্দু অধিকারী। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন-” আমরা বড় পরিকল্পনা নিয়েছি। আমরা চন্দ্রকোনা রোড ডেবরা এবং খড়্গপুরে, হাজার হাজার বিজেপি কর্মী নিয়ে জমায়েত করব। যদি এখানে একটা পোলিং এজেন্টকে মেরে বের করানো হয়, আমরা জাতীয় সড়ক তিন জায়গাতে অবরোধ করব। অন কোট বলে গেলাম। এই তিন জায়গাতে তিনজন সাংসদ নেতৃত্ব দেবেন। সেখানে জাতীয় সড়ক অবরোধ করবো আমরা।”
নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী উপস্থিতি প্রসঙ্গ নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন-” কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পরিচালনা করবে রাজ্য পুলিশের লোকেরা। তাই তাদের সীমাবদ্ধতা আছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী উপস্থিত থাকে এটাতেই আমরা আসান্বিত। এইজন্যেই ভোটাররা ভোট দিতে যাবেন। তবে হুঁশিয়ারি দিয়েই বলছি, সিপিআইএমের যখন ২৩৫ , সূর্য যখন তাদের মধ্য গগনে , এই শহরে যখন সিপিআইএমের তাবড় তাবড় নেতারা থাকেন, দীপক সরকার সহ অনেক বড় বড় নেতা ছিলেন, সেদিনও কিন্তু মেদিনীপুর শহরে ভোট লুট হয়নি। সিপিআইএমের নেতারা এটা করতে দেয়নি। সুকুমার সেনগুপ্ত যতদিন বেঁচে ছিলেন তিনি এটা করতে দেননি। আমি যখন ছাত্র রাজনীতি করতাম তখন মধ্যরাত্রে আমাকে খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গ্রেফতার করতে গিয়েছিল। সেটা তো পরদিন সুকুমার সেনগুপ্ত প্রতিবাদ করে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন। তৎকালীন শ্যামলেন্দু কৃষ্ণ মাইতি আমাকে প্রটেকশন দিয়ে আদালত থেকে রেহাই করিয়ে দিয়েছিলেন বাম আমলে।”
এরপরে ফের পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ধরে ধৃতিমান সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন -“তাই এই শহরের ধৃতিমান এর মত চাকরদের আমি বলতে চাই , যদি এই শহরে বেলাইন করেন। তাহলে পরবর্তীকালে একেবারে সাফ হয়ে যাবেন। যেটাতে আর কোনদিন ফিরে আসতে পারবেন না। কেশপুর কেশপুরের মত হয়। মেদিনীপুর শহরে কংগ্রেসের আমলেও সিদ্ধার্ত বাবুরা রিগিং করেনি, সিপিআইএমের সময়ে সিপিআইএম কেশপুর দখল করলেও এখানে লুট হতো না। আমরা অপেক্ষা করে আছি ১৩ তারিখে তৃণমূলের পুলিশ নির্ভর লোকেরা কি করে তা দেখার জন্য। “