Mysterious fire: হঠাত্ হঠাত ভূতের আগুন, উপদ্রবে নাজেহাল মেদিনীপুরের বাসিন্দারা, পথ খুঁজতে হাজির আধিকারিকরা
মেদিনীপুর: শীত কমে একটু গরম পড়তেই ভৌতিক আগুনের উপদ্রব ধর্মা ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। অর্থাৎ মেদিনীপুর শহরের আবর্জনা যেখানে ফেলা হয় প্রতিদিন। সেই আবর্জনার পাহাড়ে হঠাৎ হঠাৎ লেগে যাচ্ছে আগুন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগুন অল্প থাকলেও কালো ধোঁয়াতে ঢেকে যাচ্ছে এলাকা। আবর্জনার স্তুপ এর ভেতর থেকে কুন্ডলি পাকিয়ে বের হচ্ছে ধোঁয়া। সেই ধোঁয়া এতটাই ঘন যে ওই এলাকাতে থাকা বা বসবাস করা জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতিটা আরো জটিল হচ্ছে যত গরম বাড়ছে। আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ডের পাশ দিয়ে যাওয়া জাতীয় সড়ক ধরে যাতায়াত করা গাড়িগুলি দুর্ঘটনায় না পড়ে যায়। কারণ অতিরিক্ত ধোঁয়ার কারণে দৃশ্যমানতার সমস্যা তৈরি হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন ও বিকল্প পদক্ষেপ এর খোঁজে পৌরসভা আধিকারিকদের গিয়ে দিনভর তদন্ত চালালো মঙ্গলবার। জানালেন আগুন লাগার রহস্যের কথা ৷
মেদিনীপুর শহরের পাশে ধর্মা এলাকায় রয়েছে পুরনো আবর্জনার স্তূপ। যেটাকে বলা হয় ধর্মা ডাম্পিং গ্রাউন্ড। মেদিনীপুর পৌর এলাকা ছাড়াও বেশ কিছু এলাকা থেকে প্রতিদিনের আবর্জনা ওই স্থানে নিয়ে গিয়ে ফেলা হয়।। গত ৫০ বছরের পুরনো আবর্জনা বহু একর জমি জুড়ে পাহাড়ের আকার ধারণ করেছিল। এতে দূষণ যেমন বেড়ে চলেছিল, তেমনি স্থান সংকট তৈরি হয়েছিল। অর্থাৎ সেখানে আবর্জনা ফেলার জায়গা থাকছিল না। সেই কথা মাথায় রেখে পৌরসভার পক্ষ থেকে কলকাতার একটি কোম্পানিকে ওই আবর্জনা পৃথক করে সেগ্রিগেশন পদ্ধতিতে এলাকা থেকে সরানোর দায়িত্ব দিয়েছিল দুবছর আগে। সেই কোম্পানি কাজও শুরু করেছিল অনেকটাই। কিন্তু অর্ধেকের মত কাজ করে নিজের জিনিসপত্র নিয়ে সরে যায় সেই কোম্পানি। নিজেদের লোকসান হোক কিংবা যেকোনো কারণে চুক্তি থেকে সরে গিয়েছে তারা। এর ফলে ফের সেই এলাকাতে নতুন করে আবর্জনার পাহাড় তৈরি হয়েছে।
পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিদিন মেদিনীপুর শহর থেকেই প্রায় ১০০ টন আবর্জনা ওই স্থানে ফেলা হয়। ২৫ টি ওয়ার্ডের আবর্জনা ছাড়াও বেশ কিছু জায়গা থেকে লোকজন এসে আবর্জনা রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। ফলে আবর্জনার পাহাড় পুনরায় অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছে। শীতকাল পর্যন্ত এই পরিস্থিতি তবু ঠিক ছিল। যেই শীত কমেছে গরম বাড়ার সাথে সাথে জমে থাকা আবর্জনার ভেতরে তৈরি হয়েছে মিথেন সহ বিভিন্ন রকমের গ্যাস। যে গ্যাস গুলিতে নিজে থেকেই আগুন লেগে যাচ্ছে। আবর্জনার পাহাড়ে আগুন লেগে দীর্ঘক্ষণ ধোঁয়া তৈরি হচ্ছে। সেই ধোঁয়া বিষাক্ত ও পরিবেশ দূষক মনে হওয়াতে পৌরসভার পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কমানোর। পাম্প বসিয়ে পাম্পের সাহায্যে সেখানে জল দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যতক্ষণ জল দেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ নিভে থাকলেও তারপরেই নিজে থেকে গ্যাস হয়ে ফের আগুন লেগে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এই সমস্যা প্রকট হতে শুরু করেছে। এতে নতুন একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তা হল-ওই আবর্জনার স্তূপের পাশেই রান্নার গ্যাসের গোডাউন রয়েছে। আগুন সেখানে ছড়িয়ে গেলে বড় বিপদের আশঙ্কা থাকছে।

দায়িত্বে থাকা কর্মীরা জানাচ্ছেন, প্রতিনিয়ত তারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও সব সময় সম্ভব হচ্ছে না। গরম বাড়ার সাথে সাথে এই উপদ্রবটা আরো বাড়ছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে হাজির হন পৌরসভার পৌরপ্রধান সৌমেন খান সহ পৌরসভার বিভিন্ন আধিকারিকদের একটি টিম। পুরো এলাকা ঘুরে দেখে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা। পৌরপ্রধান সৌমেন খান জানিয়েছেন-” ইতিপূর্বে কলকাতার একটি কোম্পানিকে ৫০ বছরের পুরনো আবর্জনার পাহাড় পরিষ্কার করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারা মাঝ পথে পালিয়েছে। নতুন করে লোকাল লোকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা বাইরে থেকে আবর্জনা পৃথক করে মেদিনীপুর শহর থেকে সংগ্রহ করে এই স্থানে পাঠালেও, পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে এর সেই আবর্জনা এখানে এক হয়ে যাচ্ছে। সেই আবর্জনা এখানে জমে ফের পাহাড়ের মত তৈরি হয়েছে। যা থেকে ধোঁয়া তৈরি হচ্ছে মিথেন গ্যাস তৈরি হয়ে। আমরা দ্রুত এটা নিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি সমাধানের লক্ষ্যে।”