Medinipur Medical: ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগে উত্তাল মেদিনীপুর মেডিকেল, তদন্তে আসছেন রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের ১৩ সদস্যের দল
মেদিনীপুর: ভুল চিকিৎসায় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনা। অভিযোগ করে উত্তাল মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। রোগীর পরিবারের অভিযোগ-“মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন দেওয়া ও ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।” শুক্রবার পর্যন্ত এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরো দুজন। ঘটনায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি ও উত্তেজনা মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জুড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শুক্রবার সকাল থেকে হাসপাতাল চত্বরে বিশাল পুলিশ বাহিনী। অভিযোগ ঘিরে প্রাথমিক বৈঠক মেদিনীপুর মেডিকেলে স্বাস্থ্যকর্তাদের। ব্যবহৃত ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করল দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা। অন্যদিকে ঘটনার তদন্তে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে ১৩ সদস্যের একটি টিম শনিবার উপস্থিত হচ্ছেন মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।তবে একজনের মারা যাওয়ার পরে আরও দুজনের পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক রয়েছে ৷
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ভর্তি হওয়া বেশ কয়েকজন প্রসুতির সিজার হয়েছিল বুধবার রাতে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগে তাদের স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল। সেই স্যালাইন দেওয়ার পর পাঁচ রোগীনির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। চরম সংকট পূর্ণ অবস্থায় যাচ্ছে দেখেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খুব বেশি তৎপর হয়নি বলেই অভিযোগ রোগীদের পরিবারের সদস্যদের। সব থেকে খারাপ অবস্থা তৈরি হয় কেশপুরের রাউতা থেকে আসা এক গৃহবধুর। মামনি রুইদাস (২৪) নামে ওই গৃহবধুর ইতিপূর্বে একটি নাবালিকা মেয়ে রয়েছে। বুধবার রাতে পুত্র সন্তান হওয়ার পর তাকেও স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকেই তার অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে।
ওই প্রসূতির মা বন্দনা দাস বলেন -” অপারেশনের পর মেয়েকে স্যালাইন দেওয়া হতেই মেয়ের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। চরম শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। বারবার আমরা নার্সকে বলতে নার্স জানিয়েছে -হয় স্যালাইন এর কিছু সমস্যা হয়েছে না হলে অপারেশনে কিছু হয়েছে। এরপর আমরা চারদিকে ছুটাছুটি শুরু করি। মেয়ের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকে এবং শ্বাসকষ্ট হয়। পরে মেয়েকে আইসিইউতে পাঠিয়ে দেয়। পরে আর মেয়ের কোন জ্ঞান ফেরেনি বলে আমরা দেখেছি।এরপর শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আমাদের আর মেয়ের কোন খবর জানতে দেয়নি। কোন সিনিয়র চিকিৎসক থাকেনি। কি ভুল চিকিৎসা করে আমার মেয়েকে মেরে দিল ওরা।”
ঘটনায় একই রকম অভিযোগ অন্যান্য রোগীর পরিবারের লোকজনদেরও। ঐদিন রাতে অপারেশনের পর ঔষধ দেওয়া আরো তিনজনকে পরপর আইসিইউতে পাঠাতে হয়। এদের মধ্যেও দুজনের অবস্থা সংকটজনক বলে জানা গিয়েছে। ততক্ষণে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে হাসপাতাল চত্বরে একটি স্যালাইনের বোতলের ভেতরে ছত্রাক থাকার ছবি। রোগীর পরিবারের লোকেরা দাবি করেন-মেয়াদ উত্তীর্ণ ছত্রাক থাকা স্যালাইন দেওয়ার ফলে এই কান্ড ঘটেছে। বেলা দশটার কিছুটা পরে হাসপাতালের পক্ষ থেকে মামনি রুইদাস মারা গিয়েছে বলে জানিয়ে দেওয়া হয় পরিবারকে। ঘটনায় আরো উত্তেজনা তৈরি হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে আরো প্রচুর পরিমাণে পুলিশ বাহিনী বেড়ে যায় হাসপাতাল চত্বরে। রোগীর পরিবারের বেশিরভাগ লোকজনের অভিযোগ-“মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সব সময় জুনিয়র চিকিৎসকরা নিজেদের মতো করে চিকিৎসা করে।সিনিয়ার চিকিৎসকরা বেশিরভাগ সময়ই অনুপস্থিত থাকেন”। এপ্রসঙ্গে হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত রাউত কোন মন্তব্য করতে চাননি।
দুপুরের সময় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি জরুরী বৈঠক হয় স্বাস্থ্যকর্তা ও চিকিৎসকদের। বৈঠকের পর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাক্তার সৌম্য শংকর সরেঙ্গী জানিয়েছেন-” যে ঘটনা ঘটেছে সেটা খুবই দুঃখজনক। ঘটনা তদন্ত শুরু হয়েছে কমিটি গঠন করে। ওই সময় কারা ডিউটিতে ছিল এবং কোন কোন ঔষধ ব্যবহার করা হয়েছে সবটাই দেখা হচ্ছে। তাছাড়া পুরো ঘটনা তদন্তে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে ১৩ সদস্যের একটি টিম আসছে। যেখানে রাজ্য স্বাস্থ্যকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আধিকারিকরা থাকবেন।”
তবে যে স্যালাইন ব্যবহার করা হয়েছে তা রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের ব্ল্যাক লিস্টের কোম্পানির স্যালাইন কিনা তা নিয়ে জোর জল্পনা তৈরি হয়েছে। তবে ঘটনায় সরব হয়েছে সার্ভিস ডক্টর ফোরামের সাধারন সম্পাদক সজল বিশ্বাস ও বিজেপির নেতারা ৷