গুড়গুড়িপাল: ভালো রোজগার ও কাজের লোভ দেখিয়ে জঙ্গলমহলের শ্রমিক যুবকদের
নিয়ে গিয়েছিল গুজরাটে। তাদের জানানো হয়েছিল ওখানে শ্রমিকের কাজ রয়েছে। ভালো
বেতনও পাবে। সেই হিসেবে মেদিনীপুর সদরের ১৪ জন যুবক ঝাড়গ্রামের খালশিউলি এলাকার
এক শ্রমীক ঠিকাদার ব্যক্তির মারফত পাড়ি দিয়েছিল ভিন রাজ্যে। সেখানে গিয়ে একটি টাইলস
কোম্পানিতে কাজের পরিস্থিতি দেখে তারা বুঝতে পারেন এখানে কাজ করা যাবে না।নুন্যতম মুল্যে
কঠিন কাজ ছেড়ে ফিরতে চাইলে তাদের মোটা টাকা জমা দিতে বলে কোম্পানী ৷ বাংলা থেকে সেখানে
নিয়ে যেতে বিভিন্ন খরচ নাকি হয়েছে ৷ তাই সেই টাকা খালশিউলির যুবক মারফত কোম্পানীতে
পাঠিয়ে ৭ জন বাড়ি ফিরেছেন ৷ বাকিরা টাকা না পাওয়াতে ফিরতে পারেনি ৷এমনই এক শ্রমীকের
স্ত্রীকে কুপ্রস্তাবদেয় ওই ঠিকাদার ৷ বলা হয়–তার সাথে বিশেষ মুহুর্ত
কাটালেই তাঁর স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়া ৷ পাড়ার ক্লাবে মহিলা জানালে, ক্লাবের ছেলেরা মহিলাকে টোপ হিসেবে ব্যাবহার করে ঠিকাদারকে ডাকে ৷ গ্রামের
পাশে আসতেই ক্লাবের ছেলেরা ঠিকাদারকে আটকে ফেলে ৷ তাঁকে ঘিরে চলে চরম বিক্ষোভ ৷ সামাল
দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে গুড়গুড়িপাল থানার পুলিশকে ৷
ঘটনাটি
বৃহস্পতিবার বিকেলে পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর সদর ব্লকের কনকাবতী গ্রাম
পঞ্চায়েতের খেজুরডাঙ্গা এলাকায়। ওই এলাকা থেকে কয়েকমাসআগে ১৪ জন শ্রমীককে পাঠিয়েছিল
খালশিউলির শ্রমীক ঠিকাদার রাজু মুখী ৷ ভালো কাজ ও উচ্চ বেতনের লোভ দেখিয়ে জঙ্গলমহলের
গরীব বেকার যুবকদের গুজরাটের সুরাটে পাঠিয়েছিল ৷ সেখানে সামান্য বেতন ও কঠিন পরিশ্রমের
কাজ দেখে দু‘মাস পর শ্রমীকেরা বাড়ি ফেরার জন্য
জানান কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বাড়ি ফিরতে দিতে চাননি বলে অভিযোগ।পরিবারের লোকার
গ্রামে জানতে পেরে ঠিকাদার রাজু মুখীকে ফেরানোর জন্য জানায় ৷ স্থানীয় রা জানায়– ঠিকাদার রাজু দশ হাজার করে টাকা চায় বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য।
শুধু তাই নয়, এক শ্রমীকের স্ত্রীকে ওই ঠিকাদার প্রস্তাব দেয়– তার সঙ্গে বিশেষ মুহুর্ত কাটাতে হবে ৷ তাহলে টাকা না দিলেও এনে দেবে স্বামীকে৷ এরপরই ওই মহিলা ঠিকাদারের কথোপকথন মোবাইলে রেকর্ড করে স্থানীয়
ক্লাবের ছেলেদের জানিয়ে দেয় ৷ এরপই ক্লাবের ছেলেরা ছক কষে মহিলাকে দিয়ে ওই ঠিকাদারকে
নির্জন স্থানে ডাকায় ৷ সেই ঠিকাদার হাজির হতেই তাকে ধরে ফেলেন ক্লাবের ছেলেরা ৷ তাকে
এনে আটকে রাখা হয় ক্লাবের ভেতরে ৷ আটকে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় গুড়গুড়িপাল থানার পুলিশ।
পুলিশকেও হিমশিম খেতে হয় গ্রামবাসীদের হাতে আটক অভিযুক্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে। প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর তাকে উদ্ধার করে
থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
![]() |
গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ অভিযুক্তকে ক্লাবে আটকে |
গুজরাটে যাওয়া
সাতজন যুবক ছয় হাজার করে টাকা দিয়ে বাড়ি ফিরেছে। তাদের মধ্যে তাপস মন্ডল বলেন, “আমরা গরীব মানুষ। কাজের জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে
গিয়ে যে কাজ দেখলাম তা আমরা পারবো না। তবুও দু‘মাস কাজ করেছি। তারপর বাড়ি ফিরতে চাইলে আমাদের বাড়ি ফিরতে দেওয়া হবে না বলে
জানায়। বেশি জোর করলে মেরে ফেলা হবে বলেও জানানো হয়েছে। পরে আমরা ছয় হাজার করে
টাকা দিয়ে ৭ জন বাড়ি ফিরেছি। বাকিরা এখনো আছে।” ওখানে আটকে থাকা সাত জন
যুবকের মধ্যে এক যুবকের স্ত্রী বলেন, “রাজুর মাধ্যমে আমার স্বামী কাজে গিয়েছে। বাকিরা বাড়ি ফিরেছে। পুজোর আগে আমার
স্বামী সহ বাকিদের বাড়ি ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল। এখন রাজুকে ফোন করতে
বলছে দশ হাজার টাকা লাগবে। আমরা গরিব মানুষ তাও পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছি। তারপরও
বলছে তার সঙ্গে রাত কাটাতে হবে না। না হলে বাড়ি ছাড়বে না। বিষয়টি গ্রামে এবং
স্থানীয় ক্লাবে জানায়। গ্রামবাসীদের পরিকল্পনা মতো আজ তার সঙ্গে দেখা করতে
গিয়েছিলাম। সেখান থেকেই তাকে গ্রামবাসীরা ধরে নিয়ে আসে।” স্থানীয়দের দাবি, পুলিশ ওই সাতজন যুবকের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করুক। যতক্ষণ
না তারা বাড়ি ফিরছে ওই যুবককে ছাড়া যাবে না। পরে তাদের বুঝিয়ে অভিযুক্ত রাজু
মুখীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দা বিনয় মাঝি বলেন, “আমরা পুলিশকে পরিস্কার জানিয়েছি আমাদের যে সাতজন ওখানে
রয়েছে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা থানায় লিখিত অভিযোগও জানাবো।” যদিও
অভিযুক্ত রাজু মুখী বলেন, “সবাইকে বলা হয়েছে
তিন চার মাস কাজ করতে হবে। টাকা খরচ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এক-দু‘মাস কাজ করে ফিরে এলে মালিক যে টাকা খরচ করে নিয়ে গিয়েছে
তার কি হবে। তবে আমার ভুল হয়েছে এক মহিলাকে খারাপ কথা বলা।”