Medinipur : “জুন দি-র সাথে ব্যাক্তিগত কোনো বিরোধ নেই আমার”,বললেন জয়ী সুজয় হাজরা
প্রশ্ন: ভোট ম্যানেজার ছিলে, এবার নিজে প্রার্থী হয়ে পুরনো রোকর্ড ভাঙলে, কেমন লাগছে?
সুজয় হাজরা: নিশ্চয়ই ভালো লাগবে, এতদিন বিভিন্ন নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের জন্য মানুষের কাছে ভোট চেয়েছি। সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে মানুষের মন জয় করে ভোট নিয়ে এসেছি। তবে জয় করার কাজটা মমতাদি করেই রেখেছেন। ভালো লাগছে এই জায়গাতেই, সেই জায়গা থেকে ঘুরে এসে নিজে এবার প্রার্থী হয়েছিলাম। এবং আমার জন্য দলের অঞ্চল সভাপতি বুথ সভাপতি থেকে জেলা নেতৃত্ব সবাই বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে যেভাবে লড়াই করেছে তার জন্য আমি গর্বিত। এতে শুধু মেদিনীপুর সংগঠনিক নয়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে সমস্ত তৃণমূল কর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এটা অনুভব করেই আমি গর্বিত।
প্রশ্ন: মৃগেন মাইতি জুন মালিয়া সকলেই বিধায়ক হয়েছে তোমার আমলে, এই বিধানসভাতে তাদের কোন না করে যাওয়া কাজ তুমি সম্পন্ন করবে বলে ভেবে রেখেছো?
উত্তর: তারা কোন কাজ অপূর্ণ রেখে গেছে এমন নয়, শুধু বিধায়ককে সময়ে অসময়ে না পাওয়া একটা সমস্যা ছিল। আমি যেহেতু মেদিনীপুর হেড কোয়ার্টারে থাকি, সকলেই জানে কোন সময় কোথায় গেলে আমাকে কখন পাওয়া যাবে। সবার সবকিছু করে দিতে পারবে না কেউই, কিন্তু মানুষের সমস্যাটা শোনার মত প্রতিনিধিকে হতে হবে। সময় অসময়ে প্রতিনিধিকে পাশে পাবে এটা একটা বড় ব্যাপার। সেই পাশে পাওয়ার ক্ষেত্রে জুন দি কলকাতায় থাকতেন, মৃগেন দাও দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। বহু সময় তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। ফলে মানুষের এই না পাওয়াটা যাতে না হয় সেটা আমি লক্ষ্য রাখবো। শুনবো, যেটুকু সম্ভব হবে তাদের জন্য করার চেষ্টা করব। আর যেটা পারব না সেটা বলে দেব।
প্রশ্ন: এই বিধানসভাতে এ যাবৎ কালের সর্বাধিক ব্যবধান তৈরি করেছিল মৃগেন মাইতি, তিনি ৩২ হাজারের ব্যবধান করেছিলেন। তুমি তেত্রিশ হাজার পার করে ফেলেছ , কোন জাদুতে এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও হল?
সুজয় হাজরা: এটা জাদুতে নয় , তবে জাদুর জন্য দুজন আছেন, আমাদের সকলের প্রিয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অপরজন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি দায়িত্ব নিয়ে এটা বলতে পারি, ২০১৯ সালের পরে কয়েকটা দুর্নীতি ইস্যুকে হাতিয়ার করে বিজেপি যেভাবে কুৎসা শুরু করেছিল, বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে লড়াই করে অভিষেক ব্যানার্জি জবাব দিয়েছেন। এজন্য আমরা গর্বিত। দিদি এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর নেতৃত্বই আমাদের এই নতুন নতুন রেকর্ড গড়তে সহযোগিতা করেছে।
প্রশ্ন: আরজিকর কান্ড কোন প্রভাব ফেলল বলে মনে হয়?
সুজয় হাজরা: সেটা আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। সেটা যদি প্রভাব ফেলত তাহলে লোকসভা ইলেকশনে যেখানে এই বিধানসভাতে ২৮০০ ব্যবধান ছিল, সেটাকে ছাপিয়ে কখনো আমরা প্রায় ৩৪ হাজার ব্যবধান করতে পারতাম না। তবে এই কান্ডটা একটা সামাজিক ব্যাধি। ডবল ইঞ্জিনের রাজ্যে এটা প্রতিদিনই ঘটছে। তবু এই ঘটনাকে নিয়ে আমরা রাস্তায় নেমে বিচার চেয়েছিলাম। কিন্তু শেষে বিচার চাওয়ার নামে একটা রাজনৈতিক রূপ নেওয়া হল। টার্গেট করা হলো বাংলার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ও তার পরিবারকে। মানুষ তখনই বুঝতে পারল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আসলে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হচ্ছে এই আরজিকর কাণ্ডের আড়ালে। দেখুন মানুষ তার রায়ের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন বাংলার মাটিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে মানুষ পছন্দ করেন। তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী শুধু নয়, বাংলা দিদি হিসেবে সকলে পেতে চায়।
প্রশ্ন: অনেকটা ঝড় পার হয়ে ভালো ব্যবধানে জয়ী হয়েছো , কর্মীদের উদ্দেশ্যে এবার কিভাবে সংযত থাকার বার্তা দেবে ?
সুজয় হাজরা: দুটো জিনিস হয়েছে কর্মীদের মধ্যে, দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে কর্মীদের একটা ঢিলেঢালা ভাব চলে আসে, ক্ষমতায় থাকার কারণে তার অপব্যবহার নিয়ে নিজেদের মধ্যে দলাদলি তৈরি হয়। কর্মীদের উদ্দেশ্যে তাই একটা কথাই বলবো-“এই নির্বাচন পর্বে আমি জানিয়ে দিয়েছিলাম কোথাও কেউ কোনোভাবে দলের নামে চাঁদা তুলবে না । দলের পাওয়ার কে ব্যবহার করে দলকে ছোট করার বা বদনাম করার চেষ্টা করবেন না। দলকে অর্থ উপার্জনের মেশিন হিসেবে ব্যবহার করবেন না। দলকে বেশি করে ভালোবাসুন, দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা মানুষের কাছে বেশি করে পৌঁছে দিন। বাংলার শান্তি সম্প্রীতি কে বজায় রাখার সবদিকে চেষ্টা করুন।” এটাও বলতে পারি, আমি যদি দলকে ভালোবেসে সবটা উজাড় করে দিতে পারি তাহলে দল কিন্তু আপনার দিকে নিশ্চয়ই ঘুরে তাকাবে। দোল আপনার কথা ভাববে, না হলে আজ আমি বিধায়ক হতে পারতাম না। জেলার সভাপতিও হতে পারতাম না। আমি কোনদিন কলকাতাতে যেতাম না, আমি কোনদিন দিদির বাড়িতে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর বাড়িতে যেতাম না। কিন্তু আমি আমার কাজটা ভালো করে করে গিয়েছি। তার ভিত্তিতে আজ থেকে ৪০ মাস আগে দলের জেলা সভাপতি হিসেবে দিদি এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে বেছে নিয়েছিলেন।আজ আমাকে বিধায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছেন দিদি এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এটি কি পাওয়ার ক্ষেত্রে আমি প্রত্যাশী ছিলাম না। তাঁরা আমাকে সম্মান দিয়েছেন। তার জন্য দুজনের কাছেই আমি কৃতজ্ঞ।

প্রশ্ন: জুন মালিয়া এবং সুজয় হাজরার মধ্যে মতপার্থক্য আজও রয়েছে বলে সবাই বলে। কিন্তু তোমার জয়ের পরেই জুন মালিয়া ফুলের তোড়া নিয়ে এগিয়ে এলো। কিছুটা কি দূরত্ব মিটলো?
সুজয় হাজরা: গত পাঁচমাস আগে লোকসভার ইলেকশন হয়েছে। সকাল সাতটায় বেরিয়ে রাত্রে একটাই ঢুকতাম। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেতেও একই রকম সকাল সাতটায় বেরিয়ে রাত্রি একটায় ঢুকতে হতো। আমি যখন সকাল সাতটায় বেরিয়ে গ্রামে ঢুকতাম, তখন উনি ঘুমাতেন। ওনার পরিশ্রমটা অবশ্য বেশি ছিল প্রার্থী হিসেবে। আবার রাত্রি একটার সময় যখন আমি বাড়ি ফিরতাম তখন রাস্তায় ঝিঁঝিঁ পোকা আর রাস্তায় কিছু কুকুর ছাড়া কিছু পেতাম না। পরপর এমন যতগুলি নির্বাচন হয়েছে ততগুলিতেই এইভাবে কাজ করতে হয়েছে। আড়াই মাস কঠোর পরিশ্রম করার পর মেদিনীপুর লোকসভাতে আমরা জিততে পেরেছিলাম। ২১ টা হোটেল বিজেপির সিজ করতে হয়েছিল। বিজেপির নেতারা টাকার থলি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিল। তারপরেও কঠোর পরিশ্রম করতে পেরেছিলাম বলে সংগঠন অনেক শক্তিশালী হয়েছিল। যে কারণে মেদিনীপুর লোকসভা এবং পাশের ঝাড়গ্রাম লোকসভা দুটোই আমরা জিতে ছিলাম। আপনারা কখনোই দেখেন নি আমার সঙ্গে মাননীয় সংসদের কোনদিন ঝগড়া হয়েছে। কিংবা কথা কাটাকাটি হয়েছে , কোনদিন এই ছবি কেউই দেখাতে পারবেন না। কিন্তু কিছু সংবাদ মাধ্যম মাঝেমধ্যেই দেখিয়ে দিয়েছে সুজয়ের সঙ্গে ওনার কোথাও একটা মতবিরোধ রয়েছে। একটা পরিবারের চারজন সদস্য থাকলেই মতবিরোধ মতপার্থক্য হতেই পারে। দিনের শেষে তারা যখন একসঙ্গে খেতে বসে, সব ঐক্যবদ্ধভাবেই থাকে। এখানেও একই জিনিস। আদর্শ ও চিন্তা ভাবনার ক্ষেত্রে কাজের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। সেটাকে ব্যক্তিগত স্তরে কোন বিরোধ ভাবলে ভুল। ব্যক্তিগত স্তরে কারও সঙ্গে কোনদিন আমার কোন বিরোধ নেই। আমি একটা জিনিস পরিষ্কার জানি, দল আমাকে কোন দায়িত্ব দেওয়ার পর, সেই দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দলে যদি কেউ ক্ষতি করার চেষ্টা করে , সে যত বড় লোকই হোক না কেন , তাকে কিন্তু আমি ছাড়বার পাত্র নয়। কারন আমার কাছে যেমন আমার পরিবার, দলও তেমনি আমার কাছে একটা পরিবার। পরিবারের কেউ ক্ষতি করার চেষ্টা করলে, পরিবারকে কেউ ছোট করবে, সেটা আমি কোনভাবেই বরদাস্ত করতে পারিনা। সেই কারণেই এখন দেখবেন, আমাদের দলে অনেক প্রতিষ্ঠিত লোক ছিল, যারা পুরনো দলের লোক, কিন্তু দিনের পর দিন দলকে পেছন থেকে ছুরি মারছিল, আজকে অনেকেই কিন্তু দলে তাদের আর স্থান নেই। মিলিয়ে নেবেন, আমরা এরকম আরো কিছু ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছি, দলের নির্বাচনে যারা , দলের কঠিন সময়ে, দলকে পেছন থেকে আঘাত করেছে, তাদেরও সময় এসেছে দল থেকে বলতে পারেন সাইড লাইনে চলে যাওয়ার। সেই ধরনের কর্ম ক্ষেত্রে কোথাও যদি কোন সমস্যা থেকে থাকে , সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু ব্যক্তিগতস্তরে কোথাও কোন মতবিরোধ আমার কোনদিনই নেই। উনি ওনার একটা শ্রেণীতে থাকেন, আমি অন্য শ্রেণীতে বিশ্বাস করি। তাই সেখানে ব্যক্তিগত স্তরে কোন বিরোধ নেই। আদর্শগত বিরোধ থাকতেই পারে। সেটাকে বিভিন্নভাবে সংবাদ মাধ্যম তৈরি করেছে।