Prayagraj : কুম্ভস্নান ও ডেথসার্টিফিকেট ছাড়াই উর্মিলাদেবীর দেহ নিয়ে মেদিনীপুরে ফেরত এল পরিবার

Midnapore: “মেলাতে মারা গিয়েছে, ডেথ সার্টিফিকেট দিতে পারবো না”। পরিষ্কার জানিয়ে দিল উত্তরপ্রদেশের প্রশাসন। ফলে কোন ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই মৃতদেহ অ্যাম্বুলেন্সে তুলে পশ্চিম মেদিনীপুরে ফিরলেন উর্মিলা ভূঁইয়ার পরিবার। যার কারণে-উত্তরপ্রদেশে কুম্ভ মেলায় পদপিষ্ঠ হয়ে যে মারা গিয়েছেন উর্মিলা ভূঁইয়া, তার প্রমাণ রাখতে পারলেন না ওই পরিবারের সদস্যরা। এমনকি মৃতদেহ সেখানেই পুড়িয়ে খেলার পরামর্শ দেয় সেখানকার আয়োজকরা। একপ্রকার জোর করেই সেই দেহ সেখান থেকে নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ ফিরলেন উর্মিলা ভূঁইয়ার মৃতদেহ সহ পরিবার। শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ কুম্ভ মেলাতে পদপিষ্ট হয়ে মারা যাওয়া উর্মিলা ভূঁইয়ার দেহ মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে নিয়ে এসে ময়নাতদন্ত করেন পরিবারের লোকেরা। তদন্তে রিপোর্ট সহ ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার আশ্বাস পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের।

উল্লেখ করা যায়, গত ছমাস আগে টিকিট কেটে মহাকুম্ভে যোগ দিতে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন শালবনীর বৃদ্ধা উর্মিলা ভূঁইয়া। প্রায় আটাত্তর বছর বয়সী ওই বৃদ্ধা তীর্থে যাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়েছিলেন।১৪৪ বছর পর মহাকুম্ভ৷ সেই মহাকুম্ভে যোগ দিতে সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে গত এক সপ্তাহ আগে শালবনী থেকে নিজের মেয়ে জামাইয়ের বাড়ি খড়্গপুরে হাজির হয়েছিলেন। সেখানে সকলকে সঙ্গে নিয়ে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ কুম্ভ মেলাতে হাজির হয়েছিলেন। গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারত সেবাশ্রম সংঘে। পরে সেখান থেকে সংঘের মহারাজদের দেখানো পথ অনুসারে মঙ্গলবার রাতে অমৃতস্নান করতে হাজির হয়েছিলেন কুম্ভমেলায়। প্রত্যেকের কাছেই ছিল মোবাইল নম্বর৷ তাই সকলেই মনে করেছিলেন ভোরের ঠিক সময় স্নান করবেন সকলে, তারপর ফোনে যোগাযোগ করে নেবেন ৷ কিন্তু স্নানে পৌঁছাতেই মুহূর্তেই ব্যারিকেড ভেঙে হুড়োহুড়ি হয়ে গিয়েছিল। মুহূর্তে কয়েক হাজার মানুষ ভিড় ঠাসাঠাসি ও চাপাচাপি শুরু হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন উর্মিলা দেবী। পরিবারের সকলেই ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন বিভিন্ন জায়গায় ভিড়ে।

ভোরের ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পরেও সকাল পর্যন্ত খুঁজে পরিবারের লোকেরা উর্মিলা দেবীকে খুঁজে পাননি। সেখানেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উর্মিলা দেবীর নাতনি প্রথম দেখতে পেয়েছিলেন নিথর অবস্থায় পড়ে রয়েছে তার দিদার দেহ হাসপাতাল চত্বরে। তারপর থেকেই পরিবারের লোকেরা শোকে কাতর। খবর দেওয়া হয় বাড়িতে। কিন্তু এর পরের যে ঘটনা তা রীতিমত তিক্ত অভিজ্ঞতা বলেই জানিয়ে দিলেন ওই মহিলার জামাই। অনেক কষ্ট করে সেই দেহ নিয়ে সেখান থেকে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার বিকেলের পর হাজির হয়েছেন তারা। উত্তরপ্রদেশের প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সে করেই দেহ আনা হয়েছিল মেদিনীপুর হাসপাতালে। আগে থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই দেহ মেদিনীপুরে আনতে পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। প্রশাসনিক নিয়ম অনুসারে শুক্রবার বিকেলে দেহ মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পৌঁছাতেই মেদিনীপুর হাসপাতালে ময়না তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

মেদিনীপুর হাসপাতালে সেদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে উর্মিলা দেবীর জামাই অমল নারায়ন মাইতি জানান- ” ঘটনার অনেক পরে যখন আমরা দেহ পেয়েছিলাম, হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসতে আমরা ডেথ সার্টিফিকেট চেয়েছিলাম। কিন্তু সেখানকার প্রশাসন পরিষ্কার জানিয়ে দেয় মেলাতে মৃত্যু হয়েছে ডেথ সার্টিফিকেট দিতে পারব না। কোন ময়না তদন্তের কাজও এখানে আমরা করতে পারবোনা। দেহ চাইলে এখানেই দাহ করে দিন। এটা একটা পূণ্যভূমি।-এতে আমরা ওই প্রশাসনের আধিকারিকদের কোন কথা আমরা মানি নি। আমরা পরিষ্কার জানিয়েছিলাম এখানে দেহ দাহ করব না। আপনারা চাইলে এম্বুলেন্স দিন না হলে আমরা অ্যাম্বুলেন্স ম্যানেজ করে হলেও দেহ আমাদের জেলাতে নিয়ে যাবো । শেষ পর্যন্ত আমাদের জেদে তারা বাধ্য হয় একটা অ্যাম্বুলেন্স দিতে। কিন্তু আমাদেরকে ডেথ সার্টিফিকেট একদম দেয়নি। সেখানে কিভাবে মারা গেল কি হয়েছে কোনটাই প্রমাণ করার মত নেই। সেখান থেকে দেহ নিয়ে ফেরার অভিজ্ঞতা আরো খারাপ। রাত সাড়ে দশটায় বেরিয়ে সকাল ছটা পর্যন্ত মাত্র ১৩ কিলোমিটার আসতে পেরেছি এতোটা রাস্তা জাম।” ফলে পদপৃষ্ঠ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় কোন দায় নেয়নি উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। তাই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোন প্রশ্নও নেই।

YouTube player

এদিন মেদিনীপুর হাসপাতালে দেহ ময়নাতদন্তে আনার পরেই সেখানে এসেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভূঁইয়া। তিনি পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করে কথা বলার পর এই ঘটনা নিয়ে বিদ্রুপ করেছেন উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনকে। তিনি বলেন-” এটা খুবই বাজে হয়েছে। কতজন মারা গেছে সেই সংখ্যা পরিস্কারভাবে কেউই স্বীকার করেনি। যাতে দায় এড়ানো যায়। সব থেকে খারাপ বিষয় মারা যাওয়ার পর স্বীকার করে যে ডেথ সার্টিফিকেট দিতে হয় সেটাও দেয়নি। এই মেলার আয়োজকদের আয়োজন করার ক্ষমতাটাই ছিল না। এত পরিমাণ লোক হবে তাদের জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটাই তাদের ছিল না। আমরাও তো এখানে আমাদের রাজ্যে সাগর মেলা করেছি। এক কোটির বেশি মানুষ এসেছিল, কোথাও তো কিছু হয়নি। এই মেলার একটা অংশের দায়িত্বে আমি নিজেও ছিলাম। পুরো ঘটনা বিপজ্জনক ও অমানবিক।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page