বেলদা: ট্রেন পারাপারের জন্য রেলক্রিসং এর গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ৷ দীর্ঘক্ষন ধরে পার হচ্ছিল পরপর তিনটি ট্রেন৷ ক্রসিং এ আটকে থাকা পথচারী ও বাহনের ভীড়ে আটকে এক টোটো ৷ সেখানে বসেই পরিবারের এক মহিলা এক প্রৌঢ়ের প্রাণপণ বুকে চাপ দিয়ে হার্ট পাম্প করার চেষ্টা করছেন ৷ সকলেই উদগ্রীব কখন ক্রিসং গেট খোলে ৷ তবে শেষ রক্ষা হল না৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার অভিশপ্ত কেশিয়াড়িমোড় লেভেল ক্রসিং বাঁচার শেষ আশা টুকুও ছিনিয়ে নিল।রেল ক্রসিং গেট ফেলে পরপর ট্রেন পেরানোয় রবিবার সকালে রেলওয়ে গেটে দীর্ঘক্ষন আটকে থেকে টোটোতে বসেই মৃত্যু হল এক প্রৌঢ়ের। প্রাণপণে পরিবারের লোকেরা টোটোতেই হার্ট পাম্প করার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হলেন৷ মারা যাওয়া ব্যাক্তির নাম মনীন্দ্রনাথ ষড়ঙ্গী (৭৩) একজন অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে কর্মী ছিলেন।
অত্যন্ত কর্মঠ ও প্রাণচঞ্চল মনীন্দ্রনাথবাবু রবিবার সকালে প্রাতঃ কর্ম করতে গিয়ে নিজের বাড়ির বাথরুমে পড়ে যান। অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে বাড়ির লোকজন তড়িঘড়ি একটি টোটোতে চাপিয়ে তাঁকে নিয়ে বেলদা সুপার স্পেশ্যালিটি হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বাধ সাধে কেশিয়াড়ি মোড়ের অভিশপ্ত লেভেল ক্রসিং। লেভেল ক্রসিং বন্ধ থাকায় মনীন্দ্রবাবুকে নিয়ে পরিজনেরা আটকে পড়েন। ক্রমশ মনীন্দ্রনাথবাবুর পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হতে থাকে। পরপর তিন তিনটি ট্রেন যাতায়াত করায় পরিস্থিতির অবনতি দ্রুত হতে থাকে। অসুস্থ্য মনীন্দ্র বাবু নিস্তেজ হয়ে পড়ছে দেখে পরিবারের এক মহিলা প্রাণপণে বুকে ধাক্কা দিয়ে হার্ট পাম্প করার চেষ্টা করে চলেছেন ৷ সকলের সামনেই ভীড়ে আটকে তা ঘটে চলেছে ৷ সামনে দিয়ে পার হচ্ছে ধীরে ধীরে একের পর এক ট্রেন ৷ সেই সময় জরুরি কোন কাজে বেলদা বাজার থেকে হাসপাতালে ফিরতে গিয়ে লেভেল ক্রসিং-এ আটকা পড়েন নারায়ণগড় ব্লকের বি এম ও এইচ ডাঃ আশীষ কুমার মন্ডল নিজেও। তিনি টোটোতে মরণাপন্ন রোগীকে দেখতে পেয়ে সেখানেই পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। হাতের কাছে কোন ওষুধ না থাকায় তিনি দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর নির্দেশ দেন। তিনটি ট্রেন পারাপারের পর প্রায় কুড়িমিনিট পরে লেভেল ক্রসিং এর গেট খুললে মনীন্দ্রবাবুকে নিয়ে বাড়ির লোকেরা বেলদা সুপার স্পেশ্যালিটি হসপিটালের পৌঁছালে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।সকলেই হতাশ হলেন ওই রেলগেটের কারনে ৷
প্রায় এক বছর আগে এক রাতে অসুস্থ এক শিশুকে নিয়ে এক মায়ের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেশিয়াড়ি মোড় লেভেল ক্রসিং অতিক্রম কিরে হাসপাতালে পৌঁছানোর ঘটনা সামনে আসার পরে রেল ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ আছড়ে পড়েছিল। সেবার যথা সময়ে বন্ধ লেভেল ক্রসিং টপকে অসহায় মা তাঁর অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছানোয় জীবন পেয়েছিল শিশুটি। এবার আর সেই আশা টুকুও রইলো না।রবিবারের ঘটনায় বেলদা কেশিয়াড়ি মোড় লেভেল ক্রসিং এ অবিলম্বে ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবি জরালো হয়েছে।