খড়্গপুর: মেদিনীপুর শহরে ঢোকার চেষ্টা করেছিল হাতির দল। মশাল বাহিনী আটকে দিতে সক্ষম হলেও খড়্গপুরে কার্যত ব্যর্থ মশাল বাহিনী। তাদের কোন বাধা না মেনে প্রবেশ করল খোদ খড়্গপুর শহরে। যা ঘিরে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে গোকুলপুরে থেকে যাওয়া এক দাঁতাল। পাশাপাশি কোনো জঙ্গল নেই। ফলে হাতির থাকা নিয়ে অনেকটাই উদ্বেগ বাড়িয়েছে বনকর্তাদের।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, দশটি হাতির একটি দল মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন দেলুয়ার জঙ্গলে দুদিন ধরে আশ্রয় নেয়। সোমবার সন্ধ্যায় দেলুয়া এলাকায় বেরিয়ে পড়ে। খয়েরুল্লাচক দিয়ে চেষ্টা করে মেদিনীপুর শহরে প্রবেশ করার। কিন্তু মশাল বাহিনী তা আটকে দেয়। হাতির দলটিকে জঙ্গলে ফেরত পাঠাতে চেষ্টা করে। সেই সময় সেখান থেকে দৌড়ে মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম সড়ক পেরিয়ে কংসাবতী নদীর দিকে চলে আসে। মেদিনীপুর সদরের নেপুরা দিয়ে কংসাবতী নদী পেরিয়ে চলে যায় খড়্গপুর গ্রামীণের বড়কোলা, কেশপাল এলাকায়।
বনকর্তারা মানছেন, বিগত দিনে হাতি এই পথে এর আগে আসেনি। ফলে এদিনের হাতির যাতায়াত ঘিরে ভবিষ্যতের চিন্তা তাদের বাড়িয়ে তুলছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে খড়্গপুর বনবিভাগের বিশাল মশাল বাহিনী এসে পৌঁছায় বড়কোলা গ্রামে। পৌঁছায় খড়্গপুর বনবিভাগের ডিএফও মণীশ যাদব সহ এডিএফও এবং বিভিন্ন রেঞ্জের রেঞ্জ আধিকারিকরা। তবে মশাল বাহিনী পুনরায় জঙ্গলে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়নি দলটিকে। মশাল বাহিনীদের দেখে ছোট ছোট দলে বিভিন্নভাবে ভাগ হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে রাতের অন্ধকারে।
রাত দুটো নাগাদ হাতির দলটি পৌঁছে যায় জাতীয় সড়কের চৌরঙ্গী থেকে ১০০ মিটার দূরত্বে। তখন আরো মশাল বাহিনী জাতীয় সড়কে মোতায়েন করা ছিল। তারা বাধা দেয় যাতে জাতীয় সড়ক পেরিয়ে জকপুর এলাকার দিকে না চলে যায়। পুনরায় হাতির দল কেশপাল এলাকায় ফিরে যায়। রাত ৩ টা নাগাদ আবার জাতীয় সড়ক লক্ষ্য করে এগোনোর সময় সতকুই এলাকায় প্রবেশ করে। ফের মশাল বাহিনী গিয়ে হাতির দলটিকে ওখান থেকে ফেরত পাঠাতে পারলেও এবার সোজা চলতে শুরু করে খড়্গপুর শহরের অভিমুখে। গোলবাজার দিয়ে ভোরে পৌঁছে যায় চাঁদমারি মহকুমা হাসপাতালের পেছনের একটি ঝোপে।
আপাতত ওখানেই আশ্রয় নিয়েছে ন’টি হাতি। তবে একটি হাতি সকাল পর্যন্ত গোকুলপুর গ্রামের রাস্তায় ঘুরতে দেখা গিয়েছে। বনদপ্তর চেষ্টা করছে ওই হাতিটিকেও নিজেদের আয়ত্তে রাখতে। মঙ্গলবার সকাল থেকে পুলিশ এবং বনদপ্তরের কর্মীরা খড়্গপুরের যে এলাকায় হাতি আছে তার সংযোগকারী সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। যাতে মানুষজন গিয়ে কোনরকম বিরক্ত না করে। হাতির জন্য খাবার এবং জলেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বনকর্তাদের মধ্যেও আলোচনা চলছে, সন্ধ্যা হলে কোন পথে নিয়ে যাওয়া হবে হাতির দলটিকে। হাতির ওই দলটিকে ঘিরে রাতভর ঘুম উড়েছে বনকর্তাদের৷ মঙ্গলবার সকাল থেকে হাতির দল ইতিউতি বেরহওয়ার চেষ্টা করলেও বনকর্তারা সেই হাতির পালকে চাঁদমারি হাসপাতালের পাশে ছোট জঙ্গলে আটকে রাখে ৷ যাতে হাতি লোকালয়ে প্রবেশ করে কোনো ক্ষতি না করে ৷ দড়ি দিয়ে ওই চত্বরকে ঘিরে মশাল বাহিনী ও বনকর্তারা প্রস্তুত রয়েছেন ৷ দিনের আলো কমলেই সেই হাতিল পালকে তাড়িয়ে জঙ্গলে ফেরানোর ব্যাবস্থা করা হবে ৷