Durgapuja : “কংক্রিটের জঙ্গলে বনদেবী!” মেদিনীপুরের অভিনব মণ্ডপকে সম্মানিত করল বিশ্ব বাংলা

মেদিনীপুর : মেদিনীপুর শহরে বড় বড় পুজোর মণ্ডপ গুলি বৃহৎ আয়োজন করেছে। বহু লক্ষ টাকা খরচ করে নজর কাটতে একাধিক আয়োজন রয়েছে সেখানে। কিন্তু অল্প খরচ করেও যে নজর কাড়ার বৃহৎ আয়োজন করা যায় তা করে দেখিয়ে দিল মেদিনীপুর শহরের সৃজনী সোসিও কালচারাল এসোসিয়েশন পুজো কমিটি। মেদিনীপুর শহরের ডাকবাংলা রোডে এই পুজোর থিম সবার নজর কেড়েছে। চিন্তাভাবনাকে সম্মানিত করে বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মানে বিশেষ সম্মানিত করা হয়েছে। সম্মানিত করেছেন বিভিন্ন সংস্থা সংগঠনও।
মেদিনীপুর শহরের শরৎপল্লীর পাশে থাকা ডাকবাংলা রোডে এই পুজো কমিটি এবার ২৬ তম বর্ষের পদার্পণ করেছে। মাত্র ১০ লক্ষ টাকা এই পুজোর বাজেট। এতেই ছোট মণ্ডপ হলেও তার চিন্তা ভাবনা ছিল অনেক বড়। এখানে কংক্রিটের জঙ্গল মেদিনীপুরের ভেতরে আমরা কোন পরিবেশে আছি এবং আমরা কোথায় যেতে চলেছি তা বোঝানো হয়েছে। লাইট ও কাট বিভিন্ন গাছ এর অংশ দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছের গুরুত্ব কি তা বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে আগত দর্শনার্থীদের। এই ধরনের মণ্ডপে দেবী একজন বনদেবী।
কি রয়েছে ভেতরে ? মন্ডপে প্রবেশ করতে গেলেই প্রথমেই চোখে পড়বে গাছের গোড়া কেটে সেখানে তৈরি হচ্ছে কংক্রিটের কলাম। এক কথায় বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে জঙ্গল ধ্বংস করে বিভিন্ন নির্মাণ গড়ে উঠছে। এরপরেই এক নারী কলস থেকে জল ঢালছেন আর তা পান করছেন এক মানুষ। এই নারীকে সবুজ প্রকৃতি হিসেবে দেখানো হয়েছে, আর মানুষ রুপি সমাজের অংশ রয়েছে। এরপরেই মানুষের অবয়বে তৈরি তক্তাকে বিভিন্ন জায়গাতে লাগিয়ে তাতে পেরেক মেরে দেখানো হয়েছে প্রাণীদের যেমন এই ধরনের পেরেকে কষ্ট হয় , তেমনি একইভাবে গাছেদের ও পেরেক এবং কুঠারের আঘাতে কষ্ট হয়। বিভিন্ন গাছে পেরেক লাগিয়ে ও কুঠার ঝুলিয়ে রেখে মন্ডপের সামনে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে। মন্ডপে প্রবেশের পথে উপর এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর বিভিন্ন রকম প্রতীকি চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে। এরপর মণ্ডপের ভিতরে প্রবেশ করলেই প্রতিমা শয্যা সম্পূর্ণ আলাদা রকম নজরে পড়বে। যেখানে দেখা যাচ্ছে-দুর্গা প্রতিমা একজন বনদেবী। প্রতিমার সঙ্গে থাকা তার সন্তানদের পাশেই জোড়হাতে ক্ষমা প্রার্থনা করতে দেখা গিয়েছে কাঠুরিয়াদের। যারা জঙ্গলে কাঠ কাটতে এসে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে দেবীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছেন।
পুজোর আয়োজকদের পক্ষ থেকে কমিটির সদস্য ডঃ অসিম মন্ডল বলেন-” মেদিনীপুর শহরেই সম্প্রতি ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ভোগ করে এসেছে। প্রতিনিয়ত এই তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। আমরা ক্রমশই জঙ্গল ধ্বংস করে কংক্রিটের যে জঙ্গল তৈরি করে চলেছি তার খারাপ দিক কি হচ্ছে সেটাই দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে এই মন্ডপে। প্রকৃতিকে ধ্বংস করলে আগামী প্রজন্ম কোনভাবেই যে বাঁচতে পারবেনা তা বিভিন্ন রূপে ফুটিয়ে তোলে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। বৃক্ষ বাঁচলে যে অন্য প্রাণ বাঁচবে, গাছের কষ্ট হলে যে কি ধরনের অনুভূতি হয় তা মানব আকারেও দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে।”
কমিটির অপর সদস্য দেবজ্যোতি সান্যাল বলেন-” আমরা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি পরিবেশ সম্বন্ধে। আমরা নিজেরা শহরে থাকলেও এই কংক্রিটের জঙ্গলে বৃক্ষের জঙ্গল ক্ষতির কি প্রভাব হতে পারে তা তুলে ধরা হয়েছে। এখানে দুর্গা প্রতিমা স্বয়ং বনদেবী। তার মাধ্যমে আরো বেশ কয়েকটি বার্তা দেখানোর চেষ্টা হয়েছে মন্ডপে।”