Lalgarh : ১৪ বছর পর প্রথমবার ছিতামণি মুর্মুর গ্রামে ছত্রধর মাহাতো, সংবর্ধনা দিলেন পাল্টে যাওয়া গ্রামের বাসিন্দারা
Lalgarh : রাজ্যে পরিবর্তনের পর প্রথমবার লালগড়ের ছোট পেলিয়া (Choto pelia) গ্রামে গেলেন ছত্রধর মাহাত (Chatradhar Mahato)। স্মরণ করালেন আন্দোলনের কথা। জানিয়ে এলেন আন্দোলনই আমাদের পথ। আন্দোলন আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে, রাস্তাঘাট, পানীয় জল, শিক্ষা, খাদ্য দিয়েছে। সেই লড়াইয়ের পথেই থাকবো। শুক্রবার বিকেলে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে ছোট পেলিয়া গ্রামে হাজির হন তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাত। তাকে ফুলের মালা পেরিয়ে বরণ করেন গ্রামবাসীরা। জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডে (Ganeswari train accident) গ্রেফতার হয়েছিলেন ছত্রধর,দেওয়া হয়েছিল আরও নানা মামলা।
ওই ছোট পেলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছিতামণি মুর্মু (Chitamoni Murmu)। ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর শালবনীতে (Salboni) তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (Buddhadev Bhattyacharya) কনভয়ে মাইন বিস্ফোরণ হয়। অল্পের জন্য রক্ষা পান বুদ্ধবাবু। ৫ নভেম্বর গভীর রাতে ছোট পেলিয়া গ্রামে এক মাওবাদী নেতা (Maoist leader)ও তার সঙ্গীদের খোঁজে যায় পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রামের আদিবাসী মহিলাদের নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে। পুলিশের বন্দুকের নলের খোঁচায় ছিতামণিদেবীর বাঁ চোখ নষ্ট হয়ে যায় বলেও অভিযোগ।
এরই প্রতিবাদে জঙ্গলমহল (Jangalmahal) এর বাসিন্দারা ৬ নভেম্বর লালগড়ে রাস্তা কেটে, গাছ ফেলে পথ অবরোধ করেন৷ গাড়ি-বাস ভাঙচুরের মাধ্যমে শুরু হয় আন্দোলন। তারপর অনেক বড়ো আকার ধারন করে জঙ্গলমহলের সেই আন্দোলন৷ জঙ্গলমহলে পুলিশের অত্যাচারের প্রতিবাদে নতুন কমিটি তৈরী করেন প্রতিবাদীরা ৷ যার নাম হয় “পুলিশী সন্ত্রাশ বিরোধী জনসাধারনের কমিটি”(polici santra birodhi janasadharaner commitee) (PCPA)৷ যার নেপথ্যে নেতা ছিলেন লালগড়ের বাসিন্দা ছত্রধর মাহাতো। পরে সেই আন্দোলনের পেছনে কলকাঠি নাড়া শুরু করে মাওবাদীরা ৷ ঘটে জ্ঞানেশ্বরী ট্রেন দুর্ঘটনার মতো বিভিন্ন দুর্ঘটনাও৷ সেই কান্ডে গ্রেফতার হন ছত্রধর মাহাতো ৷ দীর্ঘ জেল জীবন কাটিয়ে জামিন পেয়ে ফিরেছেন বাড়িতে সম্প্রতি ৷
মাঠে ফিরেই আন্দোলনের প্রথমস্থান লালগড়ের ছোটো পেলিয়ে গ্রামে শুক্রবার হাজির হলেন ছত্রধর মাহাতো ৷ সেই গ্রামে ১৪ বছর পর পা রাখলেন ছত্রধর। স্মরণ করিয়ে দিলেন সেই আন্দোলনের দিনগুলির কথা। তিনি বলেন, “আন্দোলনে (Jangalmahal movement) এই গ্রামের অনেকের অবদান রয়েছে। অনেকে আহত হয়েছেন লড়াই করতে গিয়ে। তাদেরকে নিয়েই আমি হাঁটতে চাই। তাদেরকে নিয়েই আমি জনগণের সেবা করতে চাই। যে লড়াই আমাদের সামনে এসেছিল, সেই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবাংলার পরিবর্তন। সেই লড়াইয়ের মাধ্যমে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত। এই লড়াইকে সামনে রেখে আমরা এগিয়ে যাব। এই শপথটা এখনো একইভাবে নিয়ে যাব। ১৪ বছর আমি আপনাদের সামনে আসতে পারিনি বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে।”
তবে ছত্রধর মাহাত মন-প্রাণে এখনো স্মরণ করেন আন্দোলনের সেই দিনগুলি। আন্দোলনের ফলেই জঙ্গলমহল তথা লালগড়কে চিনেছিল সারা বাংলা এমনকি দেশ। সেই সময় রাস্তাঘাট, পানীয় জল সহ একাধিক অনুন্নয়নের ছবি ধরা পড়েছিল জঙ্গলমহলে। তার মাঝে বাম নেতাদের রাজপ্রাসাদ। জঙ্গলমহলবাসীর মনের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভের একদিন বিস্ফোরণ ঘটে। তার পাশে ছিল পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ। তবে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ৫ নভেম্বর রাতে ছোট পেলিয়া গ্রামে পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ ঘিরে। পরে জনগণের আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে মাওবাদীরা (Maoist attack)। সেই লড়াই হয়েছিল বলেই আজ জঙ্গলমহলে রাস্তাঘাট এবং পানীয় জলের উন্নয়ন হয়েছে। যে কথা নিজের মুখে ছোট পেলিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের সামনে স্বীকার করলেন ছত্রধর।
তিনি বলেন, “ওই আন্দোলনের ফলে অনেক মানুষই অকপটে-অন্তরালে স্বীকার করে যে, আন্দোলনই আজকে পরিবর্তনে এনেছে। আন্দোলনেই রাস্তা পেয়েছি, শিক্ষা পেয়েছি, খাদ্য পেয়েছি। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই আমাদের অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজকে স্টেজের মধ্যে উঠে যারা ভাষণ দিচ্ছে, ২০০৮-০৯ সালে এদের কোন রোল ছিল না বা এরা সেই সময় ছিলই না। আজ অনেক নেতৃত্ব এসেছে। এখন যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে, তারা আপনাদের অবদানের জন্যই আজকে নেতৃত্বটা পেয়েছে।”