ঘাটাল: ঘাটালে বড়ো বন্যা কি শেষ ! নাকি আরও বড়ো বন্যা আসছে? ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকের পরে উদ্বেগ প্রকাশ সাংসদ দেব তথা দীপক অধিকারীর ৷ টানা দেড়মাস ধরে ঘাটাল বন্যার জলে ডুবে থাকার পরে বুধবার আধিকারিকদের নিয়ে পরিস্থিতি বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন ঘাটালের সাংসদ দেব তথা দীপক অধিকারী ৷ বৈঠকে হাজির ছিলেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মুখ্যসচীব সুরেন্দ্র গুপ্ত, জেলা শাসক খুরশেদ আলি কাদেরী, পুলিশ সুপার সহ আধিকারিকরা ৷ বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে ৷
বৈঠকের পরে দেব বলেন- “গত বছরের তুলনায় এই বছর ৬০ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ডিভিসি থেকে প্রচুর জল ছাড়া হয়েছে। প্রশাসন ভালো কাজ করেছে। এই মুহূর্তে আমাদের প্রথম লক্ষ্য রাস্তাগুলোকে স্বাভাবিক করা। কুইক রেস্পন্স টিম ভালো কাজ করেছে। ১২১ জনকে সাপ কামড়ানোর ঘটনা ঘটেছিল। কারোই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এদের কারণে। কুইক রেস্পন্স টিম ভালো কাজ করেছে এদের উদ্ধারে। প্রসূতিদের অনেককে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছিল। তিনশোর বেশি কমিউনিটি কিচেন করা হয়েছিল। মানুষের কাছে খাবার পৌঁছানোর চূড়ান্ত চেষ্টা হয়েছে। বিদ্যুৎহীন স্থানেতেও বিদ্যুৎ পাঠানো হয়েছে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে কিছু করার ক্ষমতা নেই। তবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।”
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান এর সম্পূর্ণ হওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দেব বলেন-” ২০২৪ এ আমরা কথা দিয়েছি এ মাস্টার প্ল্যান করা হবে বলে। সে কাজ করতে ৫০০ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে। অনেকগুলি স্লুইস গেট মেরামত হয়ে গেছে অনেকগুলোর কাজ চলছে। সব থেকে বড় কাজ ছিল জমি অধিগ্রহণ। অনেকে প্রতিবাদে মিছিল বের করেছিল, কেউ কেউ ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানকে ঘাটাল মার্ডার প্ল্যান বলেছিল। তখনই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে নতুন করে ডিজাইন তৈরি হয় আবার। যতটা কম সম্ভব জমি নিয়ে এই কাজ করতে বলা হয়েছে। এখানে ৪০ শতাংশ জমি কম নেওয়া হবে। এই মাস্টার প্ল্যানটা মানুষের জন্য, তাই কারো জমি জোর করে অধিগ্রহণ হবে না। আমরা কোন জিনিস জোর করে করতে চাইনা। নতুন ডিজাইন সম্পূর্ণ হতে এক দু মাস সময় লাগতে পারে। দেড় মাস হয়ে গেল মানুষ জলে আছে। ছশোর বেশি সাপ উদ্ধার হয়েছে।”
দেব আরো বলেন-” ঘাটালে এখনো পর্যন্ত সব থেকে বড় যত বন্যা হয়েছে সব সেপ্টেম্বর মাসেই হয়েছে। কিন্তু আমরা এখন আছি জুলাইয়ে। তাই আমরা এখনো জানি না এটাই কি শেষ, নাকি এখান থেকে বন্যার শুরু! তাই আমরা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি এর থেকে বেশি কিছু হলে কি করে এগোবো। এখনো পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রণে। “
তবে দেব ঘটালে আসছে শুনে বিজেপির পক্ষ থেকে প্রতিবাদী পোস্টার দেওয়া হয়েছে ঘাটাল শহর জুড়ে। তার বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ করা হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে পোস্টারে। সেই প্রসঙ্গে দেব বলেন-” পোস্টারিং করে টিকে থাকা যায় না। সবাই দেব হয় না। যিনি পোস্টার মেরেছেন তিনি জনপ্রতিনিধি। সে কি কাউকে সাহায্য করেছে নাকি এক মুঠো মুড়ি দিয়েছে? উনি তো এখানকার জয়ী বিধায়ক। আমার তো আরও সাতটা বিধানসভা এলাকায় আছে, উনি তো এখানকার! আসলে রাজনীতিতে থাকতে গেলে আক্রমণাত্মক না হলে নাম আসবে না। আমি যখনই ঘাটালে আসি ওরাই এভাবে পোস্টার দিয়ে আমাকে উপহার থানা জানায়। আমি এসব পোস্টার দেখে অভ্যস্ত। কখনো সিনেমার পোস্টার, কখনো রাজনীতির পোস্টার। এই কঠিন সময় রাজনীতি করে লাভটা কার? বিরোধী রাজনীতি যারা করছেন তারা একটা কোন সহযোগিতা নিয়ে মানুষগুলোর কাছে আসেনি। এই মাস্টার প্ল্যান তো আজকের উদ্যোগ নয়। ১৯৫৪ সাল থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেউ করেনি। বর্তমানের বিরোধীরা কি কেউ একটা চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্র সরকারকে যে মাস্টার প্ল্যানটা হোক বলে? “
দিলীপ ঘোষ সম্প্রতি দেব কে ভদ্র ছেলে বলার সাথে সাথে বিভিন্ন ভাবে কটাক্ষ করেছিলেন খড়গপুরে। তার পালটা প্রতিক্রিয়া দিলেন দেব। দেব বলেন-“দিলীপ দা বোধ হয় খড়গপুর থেকে দাঁড়াচ্ছেন। তাই ভোটে লড়াই শুরু করার আগে কোথাও একটা ঢিল মারতে হয়।। আমি সহজ টার্গেট সবসময়। তাই উনি আমাকে বলে দিলেন। তবে দিলীপ দা কে আমি শ্রদ্ধা করি। অন্যদের মতো মুখে এক পেছনে আরেক কথা বলে না। নিজের মন যা বলে তাই করেন তাই বলেন। উনি যা বলেছেন রাজনীতির জন্যই।”
উল্লেখ করা যায়, দেব আসছে ঘাটালে,এটা জানতে পেরেই বিজেপির বিধায়ক শীতল কপাটের পক্ষ থেকে পোস্টারিং শুরু হয়েছিল ঘাটাল শহরে ৷ বন্যা নিয়ন্ত্রনে না আসার জন্য সেচমন্ত্রী-র পদত্যাগ দাবি ও দেবকে ঢপবাজ বলে কাটক্ষ করে পোস্টারিং করেছিল বিজেপি ৷
