Home Ghatal Live Ghatal: খেতে না পেলেও ওড়িষ্যার মতো রাজ্যে যেতে নারাজ বাংলার হানিফ-রা

Ghatal: খেতে না পেলেও ওড়িষ্যার মতো রাজ্যে যেতে নারাজ বাংলার হানিফ-রা

1
0

ঘাটাল: বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির অত্যাচারে কোনঠাসা বাংলার পরিযায়ী শ্রমীকেরা ৷ চরম হেনস্থা ও সর্বস্ব লুঠ হয়ে বাড়িতে ফিরে এমনই বিষময় অভিজ্ঞতার কাথা জানালেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের হানিফ, জানালেন- “ খেতে না পেলেও ওই রাজ্য গুলিতে বাংলার কারোই যাওয়া উচিত নয় ৷ ওরা বাঙালিদের বাঙালি বলে মনে করেনা ৷ ”

সেখ হানিফ একজন পেশায় কাঠমিস্ত্রি। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালের বেড়াবেড়িয়া। মাসকয়েক আগেও তিনি কলকাতার একটি কারখানায় কাজ করতেন। মাসে হাজার দশেক টাকা রোজগার ছিল। ওই টাকাতেই থাকা-খাওয়া বাদ দিয়ে হাতে থাকত সাকুল্যে হাজার পাঁচেক টাকা। সেই রোজগার বাড়ানোর আপ্রান চেষ্টা করছিল হানিফ ৷ বাড়িতে মেয়ের বিয়ে দিয়ে অনেক দেনা হয়েছিল ৷ তাই রোজগার বাড়াতে বিভিন্ন চষ্টা করছিল সে ৷সুযোগটা এসেও গিয়েছিল। ওডিশার বরাঙ্গ থেকে দূর সম্পর্কের এক ভাগ্নে ফোন করেছিলেন,তিনি জানিয়েছিলেন-এখানে অনেকটা বেশি টাকা পাওয়া যায়৷ তার কথা শুনে সটান পাড়ি দেন বরাঙ্গ। গত আড়াই মাসে হানিফ তিরিশ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন।

সেই টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল গত ২৭ জুন। কিন্তু বিপত্তি বাধল ঠিক তার আগের দিন। ২৬ জুন বরাঙ্গ থানার পুলিশ তাঁকে বাংলাদেশি সন্দেহে তুলে নিয়ে যায়। হানিফের অভিযোগ, তার পরেই শুরু হয় মানসিক অত্যাচার।

তাঁর কথায়, ‘ছ’দিন আমাকে পুলিশ আটকে রেখে চূড়ান্ত মানসিক নির্যাতন করেছে। একটা সময়ে মনে হচ্ছিল, আর বুঝি বাড়ি ফিরতে পারব না। ওই ক’টা দিন যে আমার কী ভাবে কেটেছে তা ভাবলে এখনও শিউরে উঠছি।’

ওই যুবকের সংযোজন, ‘বারবার আধার কার্ড, ভোটার কার্ড দেখিয়েও রেহাই মেলেনি। আমার নামে, বাবার নামে জমির কাগজও দেখতে চেয়েছিল। জমিই তো নেই, কাগজ পাব কোথায়!

আমি একেবারেই হিন্দি জানি না। যত বলি, আমি বাঙালি, আমার বাড়ি বাংলার মেদিনীপুরে, ওরা ততই ভেবে বসে আমি বাংলাদেশি। দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি জীবনে এমন বিপদে পড়ব।’

জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের সহযোগিতায় গত ৪ জুলাই হানিফ বাড়ি ফেরেন। কিন্তু বাড়ি ফিরেও অভাবের কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। গ্রামে তেমন কাজ নেই। সংসারে অভাব।

তবু হানিফের স্ত্রী জেরিনা খাতুনের এক গোঁ, ‘যা–ই হয়ে যাক, ওকে আর কিছুতেই ভিনরাজ্যে যেতে দেবো না। চারদিকে যা সব শুনছি! এ বারের মতো ও ফিরে এসেছে। পরের বার যদি না ফেরে!’

এক সময়ে বেড়াবেড়িয়ার কেঠিয়া খালের দক্ষিণে বাড়ি ছিল হানিফের। বছর কয়েক আগে সে বাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। গ্রামের লোকের দান করা চিলতে জায়গায় কোনও রকমে তিনি বাড়ি তুলেছেন।

বছর দুয়েক আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ঘাটালে। ফলে দেনাও হয়েছে বিস্তর। হানিফ বলছে, ‘এই আড়াই মাসে ভালো টাকাই জমিয়েছিলাম। বেশ কিছুটা ধার শোধ হতো। কিন্তু আমাকে তো থানায় আটকে রেখে দিল।

বাড়িতে খবর দিয়ে আদালতে আইনজীবী ঠিক করে জামিনের ব্যবস্থা করতে গিয়ে সব টাকা খরচ হয়ে গেল। একটা পয়সাও বাড়িতে আনতে পারিনি।’

মনোহরপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রামচন্দ্র কোটালের আশ্বাস, ‘হানিফ রাজি থাকলে আমরা ওকে এখানেই কাঠের কাজের ব্যবস্থা করে দেবো।’

কিন্তু ওডিশার মতো বিজেপি–শাসিত রাজ্যে কেন হানিফকে এ ভাবে হেনস্থা করা হলো? সদুত্তর মেলেনি ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাটের কাছে। তিনি শুধু শুনিয়ে দিলেন-“ রাজ্য সরকার কর্মসংস্থান করতে পারেনি বলেই সমস্যা ৷”  চন্দ্রকোণার বিধায়ক তৃণমূলের অরূপ ধাড়ার কথায়, ‘কেন্দ্র সব দিক থেকে রাজ্যকে বঞ্চনা করছে। তাই অর্থের অভাবে বেশ কিছু প্রকল্প আটকে আছে। তার পরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।’

 

 

Previous articleMEDINIPUR: স্কুল ফাঁকি দিয়ে ড্যামের ধারে ৫, জলে তলিয়ে শেষ এক ছাত্র

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here