Durgapuja : মেদিনীপুরে ১৮০ টি দুর্গা প্রতিমার নিয়ম মেনে বিসর্জন সম্পন্ন করছে প্রায় ৩০ জন মুসলিম যুবক

মেদিনীপুর: ২০২৪ এও দুর্গা পুজোর শেষ হয়ে গেল। বিসর্জন প্রক্রিয়া মেদিনীপুর পৌর এলাকাতে প্রায় মাঝপথে। এই প্রক্রিয়াতে আধুনিক ব্যবস্থা অনেক বেশি সহজ করে দিয়েছে বন্যায় জলস্ফিত থাকা কংসাবতী নদীতে বিসর্জন প্রক্রিয়া। বিশাল দেহী দুই লম্বা হাইড্রা তাদের হাত দিয়ে সন্তানদের কাছ থেকে প্রতিমাকে নিয়ে গিয়ে জলের মাঝে বিসর্জন করছে এক এক করে। সেই কাজ সম্পন্ন করতে দিনরাত কাজ করে চলেছেন ৩০ জনের বেশি মুসলিম যুবক। আধুনিক মেশিনের সাহায্যে এই কাজ অনেকটাই মসৃণ করে তুলেছেন এই যুবকের দল।
মেদিনীপুর পৌর এলাকার সমস্ত প্রতিমা বিসর্জন হবে কংসাবতী নদীর দুটি ঘাটে। যার একটি ডিএভি ঘাট, অপরটি গান্ধী ঘাট। এই দুই ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হবে প্রায়ই ১৮০ দূর্গা পূজার প্রতিমা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক আয়োজন রয়েছে সেই লক্ষ্যে। বেশি জোর দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তায়। কারণ সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বন্যার কারণে কংসাবতী নদী একেবারে ভরপুর রয়েছে। ফলে বিসর্জন প্রক্রিয়ায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা প্রবল। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে একাধিক ব্যবস্থা রাখতে হয়েছে পৌরসভা ও প্রশাসনকে। পুরো কর্মসূচি মসৃণ ভাবে সম্পন্ন করতে দিন-রাত কাজ করে চলেছেন ৩০ জন মুসলিম যুবক সহ আরো অন্যান্য সম্প্রদায়ের মিলিয়ে প্রায় ৬৫ জন যুবক। কি কি থাকছে সেই ব্যবস্থাপনায়?
মেদিনীপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান সৌমেন খান জানিয়েছেন-” দুটি ঘাটে চারটি জেসিবি, দুটি হাইড্রা মেসিন, কয়েকটি ট্রাক্টর রাখা হয়েছে। এরপরেও রয়েছে বিপর্যয় মোকাবেলা দফতরের স্পিডবোট নিয়ে কর্মীরা। প্রচুর পুলিশ কর্মীরা রয়েছেন। রয়েছে পৌরসভার কর্মীরাও। সর্বোপরি এই বিসর্জন প্রক্রিয়ায় ৬৫ জন যুবক সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।”এরপরেও মহাকুমা শাসক মধুমিতা মুখার্জি ও পৌর প্রধান সৌমেন খান দফায় দফায় গিয়ে সেই বিসর্জন প্রক্রিয়া কেমন হচ্ছে তা নজরদারি রেখেছেন।
এই বিসর্জন প্রক্রিয়ায় প্রধান কারিগর হিসেবে রয়েছেন মুসলিম যুবক শেখ মতিন। মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা। তার ৬৫ জন কর্মী নিয়ে দুটি ঘাটের বিসর্জন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন। এই ৬৫ জন কর্মীর মধ্যে ৩০ জনের বেশি মুসলিম সম্প্রদায়ের। এরপর আরো অন্যান্য সম্প্রদায়ের কর্মীরাও রয়েছেন। গত দুদিন ধরে রবিবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত চব্বিশটি প্রতিমা ইতিমধ্যেই তারা বিসর্জন সম্পন্ন করেছেন। প্রতিমাকে নির্দিষ্ট দূরত্বে পুজো কমিটির কাছ থেকে তারা নিয়ে নিচ্ছেন। এরপরে নিজ দায়িত্বে বিসর্জনের কাজে নিযুক্ত কর্মীরা গাড়িতে করে নিয়ে হাজির হচ্ছেন ঘাটে। সেখানে থাকছে বিশাল লম্বা হাতের হাইড্রা মেশিন। সেই মেশিনে পুরো প্রতিমা ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী ঝুলে থাকা প্রতিমাকে কয়েকটি পাক ঘুরিয়ে নদীর গভীর জলে নিয়ে যাচ্ছেন কর্মীরা। উপর থেকে তুলে নদী পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে সেই হাইড্রা মেশিন। এই বন্যা পরিস্থিতিতে এই হাইড্রা মেসিন চরম অসাধ্য সাধন করছে বলে জানিয়েছেন শেখ মতিন। বিসর্জন প্রক্রিয়া এই আধুনিক মেশিনের সাহায্যে অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।
প্রতিমা বিসর্জনের সাথে সাথেই নদীতে মজুত থাকা কর্মীরা প্রতিমার খড় কাঠামো বিভিন্ন জিনিস দ্রুত সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটি বিসর্জনের সাথে সাথে নদীতে কোনরকম আবর্জনা রাখা হচ্ছে না। শেখ মতিন জানান-” এখানে কে হিন্দু কে মুসলিম কেউই না। আমরা সকলেই মানুষ। সকলেই উৎসবের শামিল হয়েছিলাম। শেষ পর্বটাও সকলেই একসঙ্গে সম্পন্ন করছি। বিগত কয়েক বছর ধরেই এই মুসলিম যুবকেরা সমানভাবে শ্রদ্ধার সঙ্গে নিয়ম মেনে বিসর্জন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে।।”