মেদিনীপুর: নিত্য অত্যাচার চলতো বাড়ির বউয়ের ওপর। স্বামী শাশুড়ি শ্বশুর নির্মমভাবে অত্যাচার করতে বলে প্রতিবেশীদের দাবি। সংসার বাঁচাতে বধু লোকের বাড়িতে কাজ করে স্বামীর হাতে টাকা তুলে দিতেন। তারপরেও রক্ষা হলো না, শনিবার সকালে বাড়িতে আটকে বধুকে যখন নির্মমভাবে অত্যাচার চলছিল, তখনই আতঙ্কিত দুই বাচ্চা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। সাড়ে তিন বছরের এক বাচ্চা বাড়ি থেকে আড়ালে গিয়ে পুকুরে পড়ে গিয়েছিল। যতক্ষণে পরিবারের লোকের হুশ ফিরলো, ততক্ষণে বাচ্চার নিথর দেহ উদ্ধার হয়। তাতেই ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়লো এলাকায়। কাউন্সিলর সহ এলাকাবাসীদের ও বধুর করা অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামী শাশুড়িকে তুলে নিয়ে গেল কোতোয়ালি থানার পুলিশ। ঘটনা মেদিনীপুর শহরের হাবিবপুর এলাকার। নাবালকের দেহের ময়না তদন্ত মেদিনীপুর হাসপাতালে ৷ ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকা ৷
কয়েক বছর আগেই প্রেম করে বিয়ে করেছিল মেদিনীপুর শহরের হবিবপুর এলাকার যুবক নিরূপ গাঁতাইত। মেদিনীপুর শহরেরই এক যুবতী রুবির সঙ্গে বিয়ে করার পরেই নানান অত্যাচার শুরু হয়। যুবক নিরুপ একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করত বলে স্থানীয়দের দাবি। কিন্তু সংসার চালাতে ও সংসার রক্ষা করতে তার স্ত্রীকে কাজে পাঠাতো লোকের বাড়িতে। তাদের দুটি পুত্র সন্তান ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিরুপ সম্প্রতি পরকীয়াতে মত্ত হয়েছিল। তাই নিজের স্ত্রীকে বাড়ি থেকে সরাতে চাইছিল। তাতে সঙ্গ দেওয়ার অভিযোগ শশুর শাশুড়ির বিরুদ্ধেও। তিনজনেই নির্মমভাবে অত্যাচার করতো বলে অভিযোগ ওই গৃহবধুর। সারাদিন লোকের বাড়িতে কাজ করে ফিরে আসার পর মুখ বুজে বাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে হতো। শুক্রবার কাঠের বাটাম দিয়ে মেরে বধূর হাত ফাটিয়ে রক্তাক্ত করে দেয় স্বামী ৷ এই পরিস্থিতিতে এলাকার লোকজন ও কাউন্সিলর এর কাছে বিষয়টি জানালে শুক্রবারই কাউন্সিলর ইন্দ্রজিৎ পানিগ্রাহী ও অন্যান্যরা পরিবারের লোকজনকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়ে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টায়নি।
শনিবার সকালে ফের চরম অত্যাচার শুরু হয় ওই বধূর ওপর। বাড়ির ভেতরে চরম মারধোর চলছিল বলে অভিযোগ। ঠিক ওই সময় আতঙ্কিত বাচ্চারা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। তাতেই চরম দুর্ঘটনা ঘটে যায়। জানা যায়, সাড়ে তিন বছরের নাবালক বড় ছেলে সমু গাঁতাইত জলে পড়ে গিয়েছিল। পরিবারের লোকেরা যতক্ষণে খোঁজ শুরু করে, ততক্ষণে তার জীবন শেষ।
তারপরেই স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের বাঁধ ভাঙ্গে। ছুটে আসেন ঘটনার খবর শুনে স্থানীয় কাউন্সিলর ইন্দ্রজিৎ পানিগ্রাহী ও অন্যান্যরা। বাড়িতে এসে বিক্ষোভ দেখায় অভিযুক্ত শ্বশুর শাশুড়ি ও স্বামীকে গ্রেপ্তার করার দাবিতে। কাউন্সিলর পুরো বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ এসে তুলে নিয়ে যায় শাশুড়ি স্বামী সকলকে। ঘটনাতে চরম শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলার ইন্দ্রজিত পানিগ্রাহী৷