Vellore : ভেলোর হাসপাতালের নতুন ক্যাম্পাসে আরও আধুনিক বিশ্বমানের চিকিত্সা ব্যবস্থা
Vellore : দক্ষিণ ভারতের যে সমস্ত নামকরা হাসপাতালগুলি রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো চেন্নাইয়ের অ্যাপেলো হাসপাতাল, অপরটি ভেলোর হাসপাতাল, যা সিএমসি ভেলোর নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা তো বটেই, প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশগুলো চিকিৎসার প্রয়োজনের এই দুই হাসপাতালে ছুটে যায় জটিল চিকিত্সার প্রয়োজনে। এই দুই হাসপাতালেই বিশ্বমানের চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যায়। তবে চেন্নাই এর অ্যাপোলো হাসপাতাল ও ভেলোর হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার মধ্যে সামান্য একটু পার্থক্য রয়েছে। তা হল সময়ের ও চিকিৎসার খরচের।
চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালের পরিষেবা খুব দ্রুত পাওয়া যায়, তবে এর জন্য আর্থিক খরচ বেশি করতে হয়। অন্যদিকে সিএমসি ভেলোর তথা ভেলোর হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা গুণমানের প্রায় একই হলেও এখানকার খরচ একটু কম। তেমন অন্যদিকে এখানে একটু সময় সাপেক্ষ সমস্ত পদ্ধতি অবলম্বন করতে এবং ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নিতে। তবে পাওয়া যায়। এই ভেলোর হাসপাতাল প্রতিবেশী বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসার জন্য ভরোসার জায়গা। যেকোনো কারণে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে বিমুখ হয়ে গেলে বা সন্দেহ তৈরি হলে কিংবা জটিল কোন পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রথমেই তারা ভেলোর হাসপাতালের কথা ভাবেন। কয়েক দশক ধরে এই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা সুনাম ও বিশ্বাস তৈরি করেছে। আর তাতে ভর করেই এই হাসপাতাল তাদের নতুন ক্যাম্পাস তৈরি করে ফেলেছে পুরনো প্রধান ভেলোর হাসপাতাল থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ে ঘেরা রাণীপেট এলাকায়। বিশাল ঝাঁ চকচকে বহুতল একাধিক বিল্ডিং নিয়ে এই রাণীপেট ক্যাম্পাস। যেখানে চিকিৎসা পরিষেবা অনেক উন্নত। তবে মূল ভেলোর হাসপাতালে গিয়ে এর পরিষেবা নেওয়ার জন্য কোন অতিরিক্ত খরচ বা যাতায়াত খরচ রোগীদের এখনো পর্যন্ত করতে হচ্ছে না। রোগীরা সিএমসি ভেলোর হাসপাতালে দেখানোর জন্য এপয়েন্টমেন্ট নিলেই নিয়ম অনুসারে চিকিত্সার বিভাগ নতুন ক্যাম্পাসে পড়লেই রানীপেট ক্যাম্পাসের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে যাবেন অটোমেটিক্যালি।
তবে এসব বলার আগে একবার জেনে নেওয়া যাক এই ভেলোর হাসপাতালে পৌঁছানোর পদ্ধতি। দক্ষিণ ভারতের এই হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য ট্রেন বুকিং করে কাটপাডি স্টেশনে নামতে হয়। এই স্টেশনে নামলেই বেশিরভাগ বাঙালি রোগী ও লোকজনদের দেখতে পাবেন। স্টেশনের বাইরে বের হলেই স্থানীয় অটো ও ট্যাক্সি ড্রাইভারেরা হিন্দি ভাষায় আপনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানাবে। গড়ে ২০০ টাকা খরচ হয় যে কোন অটোতে চেপে হাসপাতাল চত্বরে পৌঁছাতে। সময় লাগতে পারে আধঘন্টা। হাসপাতাল চত্বরে একেবারে সিএমসি ভেলোর লেখা হাসপাতালের সামনেই দাঁড় করিয়ে দেবে অটো। অটো চালকেরাই কোন লজে থাকতে চাইবেন সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলবে, না হবে নিজেদের পরিচিত লজ রয়েছে বলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলবে ৷ সেখানে অটোচালকদের লজে না যাওয়াই ভালো। আপনি নিজে থেকেই বরং অটো থেকে নেমে হাসপাতালের সামনে উল্টোদিকেই থাকা একাধিক লজে থাকার রুম খুঁজে নিতে পারেন কম টাকাতে। চারশো থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে প্রতিদিন একাধিক ভালো থাকার রুম পেয়ে যাবেন। চাইলে সেই হোটেলেই রান্নাবান্না করার সরঞ্জাম ভাড়ায় নিতে পারেন। রুম বুক করার পর সামনেই হাসপাতালে এসে রেজিস্ট্রেশন কাউন্টারে নিজের নাম বুক করে কোন্ ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নিতে চাইছেন বুক করতে পারবেন সহজেই। তবে যে কোন ডাক্তারের ক্ষেত্রে বেশিরভাগই এখন রাণীপেট এলাকার নতুন ক্যাম্পাসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হচ্ছে।
নির্দিষ্ট দিনে সকালে পুরনো হাসপাতালের সামনে এপয়েন্টমেন্ট টিকিট নিয়ে এসে দাঁড়ালেই, নিরাপত্তা রক্ষী দেখিয়ে দেবে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে। পুরনো হাসপাতালে ভেতরেই বাস এসে রোনীপেট-এ নিয়ে যায় ৷ সেখানে গিয়ে আরো অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়াবেন। হাসপাতালের পক্ষ থেকে সুন্দর ভালো মানের বাসের ব্যবস্থা করা রয়েছে।বাসে উঠতে লাইন দিতে হয় ৷ খুব বেশি বল ৫ মিনিট দাঁড়াতে হবে৷ সেই বাসে করে সিট সংখ্যা অনুযায়ী সমস্ত রোগীকে ও তার পরিবারের লোকজনকে তুলে নিয়ে বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়া হবে নতুন রানীপেট ক্যাম্পাসে। এর জন্য কোন ভাড়া দিতে হবে না, বাসের ভেতরে দাঁড়িয়েও যেতে হবে না। তার কারণ প্রতি এক মিনিট ছাড়া প্রচুর বাস হাসপাতালের পক্ষ থেকে দেওয়া রয়েছে রোগী ও তার পরিবারকে সেই ক্যাম্পাসে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এবং প্রতিটি বাসে যতখানি সিট ততখানি লোকজন তোলা হবে। কুড়ি মিনিটের মধ্যে বাস পৌঁছে যাবে রানীপেট ক্যাম্পাসে। সেখানে বাস একেবারে ঝাঁ চকচকে বিশাল বড় একটি হাসপাতাল চত্বরের বড় একটি হেল্প ডেস্কের সামনে দাঁড় করিয়ে দেবে। বাসের গেট খুললেই সামনেই দেখতে পাবেন বহু নিরাপত্তা রক্ষী হুইল চেয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সিঁড়ি লাগিয়ে দেওয়া হবে বাস থেকে নামার জন্য। বাস থেকে নামলেই সামনেই পাবেন সারি দিয়ে একগুচ্ছ হেল্প ডেস্ক। যেকোনো একটি কাউন্টারে নিজের অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্লিপ টা দেখাবেন। তখনই আপনার কোন ফ্লোরে কোন দিক দিয়ে যেতে হবে তা দিক নির্দেশ দিয়ে একটি নতুন টিকিট দিয়ে দেওয়া হবে বিনামূল্যে। সেই টিকিট সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীকে দেখালে তিনি জানিয়ে দেবেন কোন গেট দিয়ে প্রবেশ করতে হবে বা কতো তলায় যেতে হবে।
ভেতরে ঢুকলেই সুন্দর সাজানো একটি ফ্লোরের চারপাশে অসংখ্য লিফট রয়েছে। যে ফ্লোরে যাবেন তার লিফটে উঠে নির্দিষ্ট ফ্লোরে পৌঁছালেই শপিংমলের মত মনে হবে ভেতরটা। এরপর যে ফ্লোরে যেতে বলবে সেখানে গিয়ে বসে থাকা হেল্প ডেস্কে নিজের টিকিটটি দিলে সেখানে কোন কাউন্টারে ডাক্তার দেখবেন তার জন্য কি কি করতে হবে সব জানিয়ে দেবেন তারা।

প্রতিদিনই হাজার হাজার রোগী ও তার পরিবার এই হাসপাতাল এখন পরিষেবা নেওয়ার জন্য হাজির হচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের নানা আধুনিক হাসপাতালের সঙ্গে এই ভেলোর হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার বড় পার্থক্য হল-রোগীর রোগ নির্ণয় ও তার পদ্ধতি। ভেলোরে গেলেই যে কোন রোগীকে যা ইচ্ছে ওষুধ দেওয়া হয় না। ভালো করে কথা বলে তার সমস্যার মূল স্থান কোথায় জানার চেষ্টা করেন চিকিত্সকেরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে মারাত্মক কোনো রোগে আক্রান্ত হয়েছে জানতে পারলেই রোগীরা চলে যান ভেলোরে৷ সেখানে সঠিক রোগ নির্নয়ে বেশিরভাগই জটিলতা কেটে যায়৷ এরপর শুরু হয় চিকিৎসা।
এই হাসপাতালে চিকিৎসার মান অনেকটাই আধুনিক ও বিশ্বমানের।দেশ বিদেশের চিকিত্সকেরা এখানে প্রশিক্ষন দিয়ে থাকেন চিকিতসকদের৷ বর্তমান পরিষেবা নতুন হাসপাতালে আরো অত্যাধুনিক এবং সরল। হাসপাতাল চত্বরেই স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার একটি নতুন বিল্ডিং রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকের টাকা তোলা বা জমা করা এই ধরনের প্রয়োজনে ব্যাংক খুঁজতে বাইরে কোথাও যেতে হবে না। হাসপাতালের ভেতরেই বড় একটি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার শাখা রয়েছে। আপনার যাবতীয় চিকিৎসক দেখানো শেষ হলেই ফিরতে চাইলে হাসপাতাল চত্বরে যেখান থেকে বাসে নেমেছিলেন হাসপাতালে ভেতরে, সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লে দেখবেন বাস এসে একইভাবে আপনাকে তুলে যেখান থেকে সকালে উঠেছিলেন সেই নিজের পুরনো ভেলোর হাসপাতালের স্থানে পৌঁছে দেবে বিনামূল্যে।
#Vellore, #Vellore hospital, #Better hospital, ##Better hospital in south India,#CMC Vellore,