Tiger : ঘুম ভেঙেই চাঙ্গা বাঘিনী জিনাত, লাল নীল বাতির কনভয়ে রাতেই আলিপুর পশু হাসপাতালে

Alipur : গত ন’দিন ধরে বন কর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন রকম লুকোচুরি করে বাঁকুড়ার জঙ্গলে (Bankura forest)ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু হয়েছিল বাঘিনী জিনাত (Jinat)। পরপর জঙ্গলমহলের তিনটি জেলা ঘুরে রবিবার বিকালে আনুমানিক চারটে নাগাদ তাকে ঘুম পাড়ানি গুলি মারতে সক্ষম হয় বনদপ্তর(forest depertment)। এরপরেই বাঁকুড়াতেই প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বিশাল কনভয় সহযোগে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কলকাতায়। রাতেই বাঁকুড়া থেকে কলকাতার আলিপুর পশু হাসপাতালে(Alipur animal hospital) বিশাল কনভয় সহযোগে তাকে নিয়ে ঢোকে বন আধিকারিকরা। সেখানে শুরু হয়েছে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এরপর তাকে পাঠানো হবে পুনরায় ওড়িশাতে(Odisha)।


বনদপ্তর সূত্রে খবর, বাঘটিকে মহারাষ্ট্র(Maharastra) থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল ওড়িষ্যাতে ৷ নির্দিষ্ট বেশ কিছু উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা বাঘটিকে জিপিএস (GPS) কলার লাগানোর পরে ছাড়া হয়েছিল সেখানকার জঙ্গলে ৷ গত ২০ ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ডের(Jharkhand) চিঁয়াবান্ধির জঙ্গল থেকে ওই বাঘিনী প্রবেশ করেছিল পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতে (Jhargram)। বাঘটিকে ছাড়ার আগেই বিশেষ জিপিএস লাগানো কলার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাঘের গলায়। তাই বাঘ যেখানে যেখানে গিয়েছে বনবাধিকারী ও কর্মীরা জিপিএস এর লোকেশন ধরে তার পিছু নিয়েছিল। বাইশে ডিসেম্বর বাঘের সিগনাল পাওয়া গিয়েছিল ঝাড়গ্রাম এর জঙ্গল পথ পেরিয়ে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের (purulia) রাইখা পাহাড়ের জঙ্গলে৷ অগত্যা বাঘ খোঁজার ডিজিটাল এন্টেনা (Digital antenna) হাতে নিয়ে বন আধিকারিকরা সেখানে রওনা দিয়েছিল। সাথে বিশাল টিম ছিল।


বনদপ্তরের আধিকারিকদের বোকা বানিয়ে ২৭ ডিসেম্বর বান্দোয়ানের(Bandoan) জঙ্গল ছেড়ে বোরো থানার পায়সাগোড়ায় পৌঁছেছিল ওই বাঘিনী। ডেরা তৈরি করেছিল স্থানীয় ঝাঁটিপাহাড়ের জঙ্গলে। সেখানে বন্দুক নিয়ে তাকে গুলি মারার চেষ্টা করেও নাগাল পায়নি বনআধিকারিকরা (Forest officers)। সেখান থেকে বাঘ পুনরায় ডেরা বদলে পুরুলিয়া ছেড়ে বাঁকুড়ার (Bankura) রাণী বাঁধের গোঁসাইডিতে প্রবেশ করে। বনদপ্তর এতদিন ধরে যে বিশাল জঙ্গলের মধ্যে তাকে ট্র্যাক করার চেষ্টা করেছিল, বাঁকুড়ার গোঁসাইডিতে তা অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। কারণ ওই ছোট্ট জঙ্গলটি মাত্র এক একরের মতো ছিল। তাই চারিদিকে জাল দিয়ে ঘিরে ফেলে বেশ কিছু জায়গায় বাইরে থেকে আগুন লাগিয়ে রাখা হয়েছিল। যাতে বাঘিনী ওই স্থানের মধ্যেই থাকে।




অন্যদিকে বাঘিনী অনেক বেশি নিস্তেজ হয়ে এসেছিল চারিদিকে ছুটে। হাঁপিয়ে উঠেছিল সে। বনদপ্তরের বিশাল দলের কাজটা অনেকটা সহজ হয়ে যায় সেখানে। ২৯ শে ডিসেম্বর রবিবার জাল দিয়ে ঘিরে রাখা সেই ছোট্ট জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে বনদপ্তরের বিশেষ বন্দুক বাহিনী। যারা সুন্দরবন (Sundarban) এলাকাতে একের পর এক বাঘ ধরাতে সফল হয়েছিল ৷সেই সুদক্ষ এক্সপার্টদের চালানো ঘুমপাড়ানি গুলিতে বাঘকে বিদ্ধ করা সম্ভব হয়। গুলি লাগতেই সেই বাঘ প্রায় ৪০ মিটারের বেশি লাফিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ঘুমের ওষুধ তাকে কাবু করে ফেলে। মুহূর্তে নিস্তেজ হয়ে যায় সে। ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সেখানে। দ্রুত সেখানে ছুটে চায় পশু চিকিৎসক (Vetenary doctor) ও বন্দুক বাহিনী।

YouTube player

পশু চিকিৎসকরা ভালো করে বাঘটিকে পরীক্ষা করে দেখেন। দেখা যায় বাঘের শরীরের পেছনের অংশে সেই ঘুম পাড়ানি গুলি লেগেছিল। ফলে বাঘের বড় কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। শরীরে যাওয়া ইনজেকশনের ওষুধও নির্দিষ্ট পরিমাণ ছিল। চারিদিকে ঘোরাফেরায় বাঘের শারীরিক পরিস্থিতি খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তাই বাঘটিকে পুরোপুরি সুস্থ মনে হওয়াতে সেখান থেকে দ্রুত ঘুম ভেঙে যাওয়ার আগে খাঁচাতে ভরে নেওয়া হয়।। কয়েকশো বনদপ্তরের ও বিভিন্ন বিভাগের কর্মী প্রস্তুত ছিলেন। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা ও জঙ্গলের গভীর থেকে তুলে আনার মধ্যে যেটুকু সময় সেটা দ্রুত সারর চেষ্টা করে।তাতেও দ্রুত খাঁচাতে ভরা সম্পূর্ণ না হলেও বাঘের ঘুম ভাঙতে শুরু করে। কোনভাবে খাঁচাতে তাকে বন্ধ করে বিশাল বাহিনী তাকে নিয়ে রওনা দেয় পূর্ব নির্ধারিত ছক অনুসারে।

তবে সেই বাঘকে খাঁচায় ভরার পর চরম স্বস্তি ফেরে প্রশাসন ও আধিকারিকদের কাছে। বিশাল এক কনভয় সেই বাঘনীকে নিয়ে এগিয়ে যায় বাঁকুড়ার জঙ্গল শেষ করে শহরের সরু রাস্তা ধরে। লোকজনের চোখ কপালে ওঠার মত কনভয় ছিল সেটি। লাল নীল বাতির শতাধিক গাড়ির গনভয় ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন৷ সেই কনভয় সোজা রাতের মধ্যেই হাজির হয়ে যায় বাঁকুড়া থেকে কলকাতার আলিপুরের পশু হাসপাতালে। সেখানে খাঁচা একটি নির্দিষ্ট কক্ষে নিয়ে গিয়ে খোলা হয়। বিভিন্ন মেশিনারী দিয়ে শারীরিক পরীক্ষা হয় সেখানে। প্রাথমিকভাবে সেখানে জানানো হয়েছে-ওই বাঘিনী সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে। তার খাবার সহ পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন বিষয়গুলিতে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই তাকে সেই পশু হাসপাতাল থেকে নিয়ে রওনা দেওয়া হবে উড়িষ্যার উদ্দেশ্যে। তবে এরপর সেখানে কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি বনদপ্তরের কেউই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page