Medinipurlive: বাবা-মা ফেলে পালিয়েছিল খড়্গপুর ষ্টেশনে, ইটালি থেকে এসে কোলে তুলে নিলেন দম্পতি

মেদিনীপুর: বাবা-মায়ের কাছে পরিত্যক্ত হয়েছিল তারা। একজনকে পাওয়া গিয়েছিল পরিত্যক্ত অবস্থায় খড়গপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়, আবার একজনকে জন্মের পর নার্সিংহোমেই ফেলে পালিয়ে ছিল বাবা-মা। অগত্যা প্রশাসনের নজরদারিতে সরকারি হোমে বড় হচ্ছিল দুই শিশু। বেশ কিছুটা সময়ে হোমে লালিত পালিত হওয়ার পরে তাদের কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে করতে বাড়িতে গেলেন দুই জোড়া দম্পতি। মেদিনীপুরে শিশু উদ্যান পার্কে অনুষ্ঠান করে ওই দম্পতিদের হাতে দত্তক দেওয়া হলো দুই বাচ্চাকে। কন্যা শিশুটি গেল ইটালি নতুন বাবা মায়ের সঙ্গে। পুত্র সন্তানটি স্থান পেল উত্তর ২৪ পরগনার এক ব্যবসায়ীর কোলে।



পশ্চিম মেদিনীপুরে সরকারি হোমে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬৪ জন শিশুকে বিভিন্ন জায়গায় দত্তক দেওয়া হয়েছে। ইটালি ফ্রান্স স্পেন জার্মানি আমেরিকা-র মতো বিদেশ থেকে এসেও নিঃসন্তান দম্পতিরা বাবা-মা হারা শিশুদের দত্তক নিয়ে গিয়েছে। সফলভাবে এই দত্তক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কারণ দত্তক দেওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্ভে করে দেখা হয় যে তারা কেমন রয়েছে। তাতে সকলেই খুশি এবং স্বাচ্ছন্দের জীবন পেয়েছে। এমন দত্তক দেওয়া ৩০ জোড়া দম্পতিও হাজির হয়েছিলেন মেদিনীপুর শহরের শিশু উদ্যান পার্কে বৃহস্পতিবার। তাদের নিয়ে গেট টুগেদার করলেন অতিরিক্ত জেলাশাসকসহ প্রশাসনের আধিকারিকরা৷


বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল মেদিনীপুরের অরবিন্দ শিশু উদ্যান পার্কে। যার শীর্ষক ছিল- “ফাস্টার কেয়ার এন্ড ফাস্টার কেয়ার লিডিং টু অ্যাডাপশন”। দত্তক গ্রহণকারী পিতা-মাতাদের নিয়ে একটি কর্মশালা হয় সেখানে। যার ব্যবস্থাপনায় ছিল সমাজকল্যাণ দপ্তরের জেলা শিশু সুরক্ষা বিভাগ। যেখানে-কয়েক বছরে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে দত্তক নেওয়া প্রায় ৩০ জোড়া দম্পতি হাজির হয়েছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। দত্তক নেওয়ার পর তাদের বাচ্চা ও তারা কেমন রয়েছেন সেসব নিয়ে জানালেন তাদের প্রতিক্রিয়া। তাদের সামনেই দুই শিশুকে দত্তক দেওয়া হয়েছে নতুন করে এদিন।



জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে- ২০২৩ সালে বছর দেড়েকের এক কন্যা সন্তানকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল খড়গপুর স্টেশন থেকে। প্রশাসনের আধিকারিকরা তাদের পদ্ধতিতে খোঁজখবর নিয়েও পরিবারের কোনো খোঁজ পাননি। অবশেষে তার স্থান হয়েছিল মেদিনীপুরের সরকারি হোমে। সেই বাচ্চাকেই দত্তক নেওয়ার জন্য ইটালি থেকে এক দম্পতি সরকারি নিয়মে আবেদন করেছিলেন আন্তর্জাতিক দত্তক সংস্থার কাছে। তা বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে পশ্চিম মেদিনীপুরে হাজির হয়। সমস্ত ভেরিফিকেশন পর্ব সম্পন্ন করে সেই দম্পতিকেই খড়গপুর স্টেশনে পরিত্যক্ত কন্যা সন্তান অষ্টমীকে তুলে দেওয়া হয়েছে। চরম আদরে সেই ইটালি থেকে আগত নিঃসন্তান দম্পতি নিয়ে গেলেন মা-বাবা পরিত্যক্ত অষ্টমীকে। অষ্টমীর পাসপোর্ট করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বাচ্চা পেয়ে নিজেদের ভাষায় তারা অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জানালেন প্রশাসনের আধিকারিকদের।

অপর বাচ্চা ছিল সরকারি হোম এর দেওয়া নামের “নীলাভ”। বছর আড়াই এর নীলাভ জন্মের পর মা-বাবা পরিত্যক্ত হয়েছিল। পূর্ব মেদিনীপুরের একটি নার্সিংহোমে তার জন্মের পর বাবা-মা তাকে নিতে অস্বীকার করেছিল। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে শিশু নিতে অস্বীকার করে জানিয়ে তারা চলে গিয়েছিল। তাই সরকারি নিয়ম অনুসারে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ সেই শিশুকে প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়েছিল। হাত ঘুরেছে সেই শিশু মেদিনীপুরের সরকারি হোমে লালিত পালিত হচ্ছিল। সেই পুত্র সন্তান শিশুকেই দত্তক হিসেবে নিলেন উত্তর চব্বিশ পরগনার এক দম্পতি। চরম আদরে কোলে তুলে নিয়ে হাসতে হাসতে বাড়িতে ফিরলেন তারা।

অতিরিক্ত জেলাশাসক কেম্পা হন্নাইয়া বলেন -” এযাবৎ ৬২ টি বাচ্চা আমাদের এই দত্তক কেন্দ্র থেকে নিঃসন্তান দম্পতিদের দত্তক দেওয়া হয়েছে সফল ভাবে। নতুন করে আরো বেশ কয়েকজন বিদেশ থেকে আবেদন করেছেন তাদের ভেরিফিকেশন চলছে। আজকে এদের মতই আরও দুজনকে দত্তক দেওয়া হল।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page