Banglar Bari: “বাংলার বাড়ি”র তালিকায় একের পর এক পঞ্চায়েত প্রধানের নাম ! প্রত্যেকেই ছুটছেন নাম বাদ দিতে
মেদিনীপুরঃ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে আবাস যোজনার বাড়ি নিয়ে নানান অভিযোগ শোনাযাচ্ছে জনপ্রতিনিধি ও শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে ৷ প্রভাবশালি নেতা ও বড়োলোকেরা নাকি সেই বাড়ি হাতাচ্ছেন বলে নানা অভিযোগ ৷ সেখানে পশ্চিম মেদিনীপুরে অন্য বিষয় সামনে এলো ৷ দেখা যাচ্ছে, একের পর এক পঞ্চায়েত প্রধানের নাম রয়েছে বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ৷ নিজেদের তালিকাতে রয়েছে, তা বাদ দিতে ছুটছেন সার্ভেয়ারদের কাছে ৷ মেদিনীপুর সদরব্লকে এক পঞ্চায়েত প্রধান আবেদন করলেন আমার বাড়ি গরীবকে দেওয়া হোক, ডেবরাতে তালিকাতে দেখা গিয়েছে দুই পঞ্চায়েত প্রধান এর নাম রয়েছে বাংলার বাড়ির তালিকাতে ৷ তাই নিজেদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে অনুরোধ করেছেন ৷ ধন্যবাদ জানিয়েছেন- প্রশাসনিক কর্তারা ৷ তবে বিজেপির দাবি- ২০২৬ কে সামনে রেখে এটা আই ওয়াস করছে শাসকদল ৷
তবে এই পঞ্চায়েত প্রধানরা সকলেই আবেদন করার সময় কেউই প্রধান বা জনপ্রতিনিধি ছিলেন না ৷ ২০১৮ সালে আবেদন করেছিলেন নিজেদের অবস্থা বিবেচনা করে ৷ পরে ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে লড়াই করে জয়ী হয়ে প্রধান হয়েছেন ৷ ৬ বছরে এদের আর্থিক পরিস্থিতিও পাল্টেছে ৷ এই প্রধানরা তাই নিজেদের বাড়ির তালিকা থেকে নাম কাটাতে ছুটছেন ৷ বিজেপির জেলা সহ সভাপতি অরুপ দাস বলেন-“ কয়েকবছরে এনন কিছু আর্থিক পরিস্থিতি পাল্টানোর কথা নয় ৷ এটা শাসকদলের একটা নাটক ৷ ২০২৬ এর নির্বাচনকে মাথায় রেখে ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাত থেকে বাঁচতে এই আইওয়াস তৃণমূলের ৷”
তালিকা নাম কাটার প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লকের মুন্সিপাটনা এলাকাতে ৷ ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা তপশিলী উপজাতি পরিবার মঙ্গল বাস্কে-র ৷ তিনি তৃণমূলের স্থানীয় বুথ সভাপতি ৷ তাঁর বৌমা যমুনা বাস্কে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ৷ সম্প্রতি বাংলার বাড়ির তালিকা রি-ভেরিফিকেশন শুরু হতেই দেখা গিয়েছে মঙ্গলবাবুর স্ত্রী দুলারি বাস্কের নামে বাড়ি এসেছে ৷ তখনই টনক নড়ে, মঙ্গলবাবু বলেন- “আবেদন করার সময়ে ২০১৮ সালে মাটির বাড়ি ছিল । এখন আমার পাকার বাড়ি নিজেরাই করেছি । তাই এই বাড়ি আমার দরকার নেই , কোনো গরীবকে দেওয়া হোক”। বৌমা যমুনা বাস্কে পাঁচখুরি এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান ৷ তিনি বলেন-“ আমার শ্বাশুড়ির নামে বাড়ি এসেছে ৷ এটা আমাদের দরকার নেই ৷ আমরা বাতিলের আবেদন করেছি ৷ ”
একই ঘটনা ঘটেছে জেলার ডেবরা ব্লকেও ৷ ডেবরা ব্লকের ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পূর্নিমা ভুঁইয়া এবং রাধামোহনপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তনুশ্রী মন্ডলের স্বামীর নামে আবাস যোজনায় তথা বাংলার বাড়ির প্রকল্পের তালিকায় নাম রয়েছে। তারা আর্থিক দিক থেকেও বিবেচনা করলে পাওয়ার যোগ্য। তা সত্তেও তাঁরা সেই বাড়ি ফেরত নিতে বা তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে দুই প্রধান দাবি করেছেন বিডিও-র কাছে ৷ দলের এবং নিজেদের ভাবমূর্তি ঠিক রাখার জন্য তারা বাড়ী ফিরিয়ে দিলেন লিখিত ভাবে।ইতিমধ্যে বিডিওকে তাঁরা জানিয়েও দিয়েছেন।পুর্ণিমা ভুঞা বলেন-“ আমি গরীব ঠিকই, কিন্তু আমাদের এলাকাতে আমার থেকেও গরীব রয়েছে ৷ তাদের বাড়িটা পেলে উপকার হবে ৷ আমি এলাকার প্রধান , আমার কাছে সকলের আশা রয়েছে ৷ তাই আমি চাইবো আমাদের বাড়ি না দিয়ে সেটা দেওয়া হোক অন্য কোনো গরীবকে ৷ ” একই রকম দাবি রাধামোহনপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তনুশ্রী মন্ডলের৷
এই বিষয়ে ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বাদল চন্দ্র মন্ডল জানান- “আমরা আমাদের দলের দুই প্রধানকে সাধুবাদ জানাই।ওনাদের এই ভূমিকা নিয়ে।তাদের স্বচ্ছতা দলের অন্যান্য কর্মীদের কাছে ভালো বার্তা দেবে৷” ডেবরা ব্লকের বিডিও প্রিয়ব্রত রাড়ী বলেন –“ আমাদের কাছে বাড়ী ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন এসেছে।আমরা তা গ্রহন করেছি। ওনারা বাড়ী পাওয়ার যোগ্য। যেহেতু ওনারা জনপ্রতিনিধি, তাই নিজেদের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখার জন্য ওনারা বাড়ী ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমরা ওনাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই৷”
জানা গিয়েছে, বাড়ির জন্য আবেদন জমা নেওয়া হয়েছিল ২০১৮ সালে। চার বছর পর, ২০২২ সালে একটা সমীক্ষা হয়। সেই সময়ে একটি তালিকা তৈরি হয়, কারা ঘর পাওয়ার যোগ্য, আর কাদেরর আবাসের ঘর প্রয়োজন নেই। যদিও তালিকা তৈরি হলেও আবাসের জন্য কোনও টাকা বরাদ্দ বা উপভোক্তার একাউন্টে জমা করা হয়নি। শাসক দলের অভিযোগ, কেন্দ্রের সরকার আবাসের টাকা আটকে রেখেছে। বাংলার বাড়ি নামে বাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিসেম্বর আসের মধ্যে আবাসের টাকা উপভোক্তাদের একাউন্টে ঢোকার কথা। তাই ফের ২০২৪ সালে নতুন করে সার্ভে শুরু হয়েছে। সরকারি লোকজন এলাকায় সমীক্ষা করতে যাওয়ার পরই সকলে জানতে পারেন তালিকাতে তাঁদের নাম রয়েছে ৷ ততক্ষনে আর্থিক পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে অনেকেরই৷ বিভিন্ন কারনে তাই এই প্রধানরা নিজেদের জনমানসে ইমেজ ধরে রাখতে ছুটছেন নাম কাটাতে ৷