ঘাটাল: পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের সবথেকে বড় উৎসব বা মেলা হল ” ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলা”। এই মেলার বরাবরের মতো শীর্ষ পদে থাকতেন ঘাটালের মহকুমা শাসক, তারপরেই থাকতেন ঘাটালের সংসদ দেব তথা দীপক অধিকারী। গত বছর পর্যন্ত এই মেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন দেব ও প্রাক্তন বিধায়ক শংকর দোলই। এবার দেখা গেল মহকুমা শাসক ও সাংসদদের কমিটির কোন পদেতেই নেই। একেবারে কমিটির বাইরে। যুগ্ম সম্পাদক থেকে শুধু সম্পাদক হিসেবে শীর্ষে রয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক শংকর দোলই। তাতেই নানা জল্পনা রাজনৈতিক মহলে। বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট এর দাবি-” বিজেপি বিধায়ক বলে আমাকে কখনো ডাকাই হয়নি। এবার তো কাটমানি খোর নেতার কারণে সাংসদ মহকুমা শাসক দুজনেই বাদ গেল। এটা শাসকদলের মেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। এটার যে দুর্নীতি হয় তা নিয়ে আমরা আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছি।”
ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলা যা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মধ্যে অন্যতম একটি বড় মেলা। নিয়ম অনুযায়ী মেলার যে প্রস্তুতি বৈঠক হয়, স্থানীয়দের দাবি সেই সময়ের আগেই প্রস্তুতি বৈঠক হল ঘাটালের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে। যে বৈঠকে ছিলেন না সাংসদ দেব , মহাকুমা শাসক কেউই। তবে বৈঠকের পৌরহিত করেন প্রাক্তন বিধায়ক শংকর দোলই। ছিলেন আরো অন্যান্যরা।
স্থানীয় একাংশের দাবী, ঘাটালের সাংসদ তথা অভিনেতা দীপক অধিকারী (দেব) এর উপস্থিতিতে এই প্রস্তুতি সভা হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই তড়িঘড়ি ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক (তৃণমূল)শংকর দোলই এর ডাকে ঘাটাল অরবিন্দ স্টেডিয়ামে হঠাৎ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এই মিটিং এ সাংসদ অনুগামী এবং সাংসদ প্রতিনিধিকেও ডাকা হয়নি। বিগত দিনেও এই মেলা কমিটিতে ছিলেন সাংসদ দীপক অধিকারী । গত বছরের কমিটিতে তিনি যুগ্ম সম্পাদক পদে ছিলেন। যুগ্ম হিসেবে ছিলেন দেব ও শংকর দোলই। এবছর কমিটি থেকে দেব কে বাদ দেওয়া হয়েছে। মেলা কমিটিতে রাখা হয়নি ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাসকেও।
যদিও এই বিষয়ে মেলা কমিটির নবনির্বাচিত সম্পাদক শংকর দোলই জানান -“দেবের সঙ্গে কথা বলার পরেই এই মিটিং আয়োজন করা হয়েছে। এই মেলায় পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি শুটিংসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যস্ত রয়েছেন। তার সম্মতিতেই এই কমিটিতে তিনি নেই। অন্যদিকে ঘাটালের মহকুমা শাসক, তিনি একজন সরকারি আধিকারিক। তারও বিভিন্ন রকম বিভাগীয় কাজের ব্যস্ততা রয়েছে। তিনি অনেকবার এই কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। তাই তাঁকে এই কমিটিতে আর রাখা হয়নি। এর মধ্যে অন্য কোন রকম গন্ডগোল নেই। দেব আমাদের প্রিয় সাংসদ। তাকে আমরা অনুরোধ করেছি প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি উদ্বোধনে থাকবেন।”
তবে এই প্রসঙ্গে ঘাটালের সাংসদ প্রতিনিধি রাম পদ মান্নার সাথে আমরা যোগাযোগ করলে, তিনি ক্যামেরার সামনে কোন প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে তিনি আমাদের জানিয়েছেন, এই মিটিং সম্বন্ধে তিনি কিছুই জানেন না, এমনকি দেবও হয়তো কিছুই জানে না।তবে যাই হোক এই ঘটনায় শাসক দল তৃণমূলকে তীব্রভাবে কটাক্ষ করেছে ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট ও ঘাটালের সিপিআইএম নেতা চিন্ময় পাল।
বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট বলেন -” গৌরবের এই শিশুমেলা উৎসব এতদিন মানুষের ছিল। কিন্তু এই সরকার আসার পর এই মেলাটি শাসক দলের মেলা হয়ে গিয়েছে। যেখানে শাসকদলের কাটমানি খোর নেতারা কর্তৃত্ব ফলায়। এই মেলাতেই বিজেপি বিধায়ক হিসেবে আমি কখনো স্থান পাইনি। এবার মহাকুমা শাসক ও সাংসদ দেবও বাদ গেল। এখানে স্থান পেয়েছে দুশ্চরিত্র দুর্নীতিবাজ নেতা। ঘাটালের সাধারণ মানুষকে এর প্রতিবাদ করতে বলবো। একইসঙ্গে এই মেলা উপলক্ষে যে দুর্নীতি হয় তার জন্য আইনের দ্বারস্থ হব আমরা। এজন্য রাজ্যের বিরোধী দলনেতার সঙ্গেও আলোচনা করছি।”
ঘাটালের সিপিআইএম নেতা চিন্ময় পাল বলেন-” এই মেলা এখন রাজনৈতিক দলের মেলা, তৃণমূলের মেলা। মেলাটা এখন ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক হয়ে গেছে। চরম দুর্নীতির আশ্রয়স্থল এটা এখন।”
স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে জল্পনা -সাংসদ দেব বনাম তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক শংকর দোলইয়ের যে মতপার্থক্য ইতি পূর্বে প্রকাশ্যে এসেছিল, সেই কোন্দলেরই হয়তো ফলশ্রুতি মেলার নতুন কমিটিতে দেবের স্থান না পাওয়া। তবে সেই জল্পনা অবশ্য অস্বীকার করেছেন শংকর দোলই