ঝাড়গ্রাম : প্রায় সাত বছরের বেশি সময় ধরে জঙ্গলমহলের মাওবাদী পর্বে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কাজ করেছিলেন ভারতী ঘোষ ৷ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে দাপুটে পুলিশ সুপার হিসেবে কাজ করে দক্ষতা দেখিয়েছিলেন তিনি ৷ শাসকদলের ভরোসা অর্জন করেছিলেন ৷ পরে বিভিন্ন পরিস্থিতির রদবদলে চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন ৷ বর্তমানে তিনি বিজেপির জাতীয়স্তরের মুখপাত্র ৷ সেই ভারতী ঘোষ বুধবার সন্ধায় একসময়ের মাওবাদী উপদ্রুত এলাকা ঝাড়গ্রামে বাঁশপাহাড়িতে হাজির হয়েছিলেন ৷ সন্ধার সময়ে তাঁর উপস্থিতি দেখে স্থানীয় পুলিশের আধিকারিকরা গাড়ি নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন কোনো সহযোগীতা বা নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য৷ ভারতী ঘোষ নিজের গাড়ি দাঁড়করিয়ে তাঁদের জানিয়ে দেন- “জঙ্গলমহলে আমাকে সুরক্ষা দিতে হবে না,আপনার সুরক্ষার প্রয়োজন হলে আমাকে খবর দেবেন।”
বাঁশপাহাড়ি এলাকাতে স্থানীয় জঙ্গলমহলের মানুষের সাথে নিজের পুরনো জনসংযোগ কর্মসুচীতে হাজির হয়েছিলেন তিনি ৷ সেখানে স্থানীয় একটি হলে ছোট্ট অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে স্থানীয় সাতটি ক্লাবের ছেলেদের ফুটবল উপহার দিয়েছেন ৷ ছোটো কচিকাচাদের হাতে চকোলেট উপহার তুলে দিয়েছেন ভারতী ঘোষ ৷ স্থানীয় মহিলাদের সাথে খোশগপ্প করেছেন তিনি ৷ তাঁর হাতে শাসন হওয়া জঙ্গলমহলের ওই অংশ কেমন রয়েছে এখন, তার খোঁজ নেন তিনি ৷
এদিন তিনি সংবাদ মাধ্যমের সামনে বলেন- “আমার জীবনের একটা ক্রিমটাইম, যে সময় মানুষ অনেক আনন্দ করে, সেই সাত বছর আমাকে এখানে জঙ্গলমহলে দিতে হয়েছে। জঙ্গলমহলের মানুষের সাথে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। শুধু মাও মুক্ত করিনি এই জঙ্গলমহল, নতুন একটা পরিচয় দেওয়া হয়েছিল। এত পরিশ্রম ও উৎসর্গ করার পর ভেবেছিলাম মানুষ ভালো থাকবে। ফুটবল ক্লাব গুলো ভালোভাবে খেলবে, মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল বিভিন্ন ক্লাবগুলোতে প্রতিনিধিত্ব পাবে। আমরা বাইরে থেকে খেলোয়াড় আনবো কেন? জঙ্গলমহলে তো অনেক ভালো ভালো ছেলে মেয়েরা আছে, যারা ভাল খেলে। কেন তারা সুযোগ পাবে না? জঙ্গলমহলের ছেলেমেয়েদের কেন শহরের কাছে আনা হবে না? রাস্তাঘাট ভালো করে পাকা বাড়ি কেন দেওয়া হবে না? স্বাস্থ্য কেন্দ্র ভালো করে, ইংরেজি মাধ্যম, সাঁওতালি ভাষায় স্কুল কেন দেওয়া হবে না জঙ্গলমহলে ? জঙ্গলমহলের মানুষকে শহরের কাছাকাছি কেন আনা হচ্ছে না? শহর এবং গ্রামের উন্নয়ন যখন হবে তখনই আমরা বলি দেশের উন্নয়ন হয়”।
তিনি আরও বলেন- “আমি এখানে এসেছি, মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করছি তাদের কি কি সমস্যা রয়েছে। যা সমস্যা পাব আমি নরেন্দ্র মোদীজিকে জানাবো, দিল্লিকে জানাবো। আমাদের পক্ষ থেকে যতটা পারবো আমরা বারবার এসে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করব। এখানকার মানুষ বলার জন্য উদগ্রীব কিন্তু শোনার মত কেউ নেই। ভোটের আগে বাটি নিয়ে চলে এলাম, বললাম ভোট দিন, তাতে কিন্তু হবে না। এরা চায় ধৈর্য ধরে কথাটা শুনুন এবং তাদের সমস্যার সমাধান করুন”।
এদিন বাঁশপাহাড়ীতে যাওয়ার রাস্তায় পুলিশের একটি গাড়ি ভারতী ঘোষের গাড়ি লক্ষ্য করে এগিয়ে এসেছিল। পুলিশ কর্মীরা কথা বলেছিলেন ভারতী ঘোষের সঙ্গে। এই প্রসঙ্গে ভারতী ঘোষ বলেন- ” প্রশাসন আমার সুরক্ষার জন্য এসেছে এজন্য তাদের অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু এই জঙ্গলমহলে যখন প্রচন্ড বিপদ ছিল, এখানে তখন কাউকে দেখা যেত না । যারা এখন বড় বড় কথা বলে বেড়াচ্ছেন তাদের কাউকেই দেখা যেত না। তখন এই ভারতী ঘোষ একা সামলেছে। তাই প্রশাসনের যে আধিকারিক আজকে এসেছিলেন তাকে বললাম-আমাকে সুরক্ষা দিতে হবে না , আপনার সুরক্ষার প্রয়োজন হলে আমাকে খবর দেবেন। তবে আমি কোন বাধাকে বাধা মনে করি না। জন্ম এবং মৃত্যু একবারই হয়। মাঝে ভয় বা বাধা কোন বাধাই নয় । আমি যদি মনে করি কোথাও বেরোবো-তো বেরবো। যদি বসে থাকব বলে মনে করি তো বসে থাকবো। কারণ আমি একজন এই শতকের স্বাধীন মানুষ।”