Medinipur Hospital: জলে ডোবা কিশোরকে মৃত ঘোষণা মেদিনীপুর হাসপাতালে, ডেথ স্টিকার মাথায় লাগানোর পরে বেঁচে ওঠার দাবিতে উত্তাল মেদিনীপুর হাসপাতাল

মেদিনীপুর: জীবিত রোগীকে নাকি মৃত ঘোষণা করে দিয়েছিল মেদিনীপুর হাসপাতাল। জলে ডুবে যাওয়া এক কিশোরকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমার্জেন্সিতে ভর্তি করেছিল পরিবারের লোকেরা। ইমারজেন্সিতে থাকা চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করে তার মাথায় ডেথ স্টিকার চিটিয়ে দিয়েছিল। পরিবারের লোকজনের দাবি-“ভালো করে না দেখেই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল। আমরা মুখে চাপ দিয়ে হাওয়া দিতে সে জল বমি করা শুরু করে। এবং শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া শুরু হয়েছিল। তারপরে আমাদের দাবি মতো অক্সিজেন দেওয়ার চেষ্টাও হয় ৷ পরে সেখানে মৃত্যু হয়। চিকিৎসকদের গাফিলতি ও দেরিতে মৃত্যু হয়েছে কিশোরের। অবিলম্বে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে”। তবে ঘটনা ঘিরে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল রবিবার রাতে মেদিনীপুর হাসপাতালে। পরিস্থিতি সমালোতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে হয়। হাসপাতাল সুপারের দাবি-“এই ধরনের ঘটনাতে মৃতের পেশি সংকোচনের ফলে অনেক সময় মুখ থেকে তরল পদার্থ বের হয়৷ তা দেখেই হয়তো পরিজনেরা ভেবেছিল রোগী বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রোগী মৃত অবস্থাতেই এসেছিল।”

ঘটনার পরে মেদিনীপুর হাসপাতালে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী

জানা গিয়েছে রবিবার বিকেলে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে খড়গপুর শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের এক কিশোর ভি সাই (১৮), মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন কংসাবতী নদীতে স্নান করতে এসেছিল। সেখানে স্নান করতে এসে জলে তলিয়ে যায় সে। কোনভাবে স্থানীয়রা তাকে চেষ্টা করে উদ্ধার করে। পরে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে এমার্জেন্সিতে থাকা চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরে তার কপালে ডেথ স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হয়।



পরিবারের লোকজনের দাবি-” তাকে ভালো করে পরীক্ষা না করেই এই মৃত ঘোষণা করে দেওয়া হয়। আমরা সন্দেহ হওয়াতে মুখে ফু দিয়ে চাপ দিতেই সে জল বমি করা শুরু করে। এবং তারপরেই হার্ট চালু হয়ে যায়। আমরা বিভিন্ন ডাক্তারকে বারবার অনুরোধ করি দেখার জন্য। কেউই গুরুত্ব দেয়নি। অনেক চেষ্টা করে পুলিশ অন্যান্যদের বলার পর তাকে অক্সিজেন দিতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে মৃত ঘোষণা করে আবার।”


এই ঘটনাতে এমার্জেন্সিতে থাকা চিকিৎসকদের গাফিলতিতে পরে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে এমন দাবি করে উত্তেজনা তৈরি হয়। খড়গপুর থেকে আসা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে চিকিৎসকদের গাফিলতি নিয়ে। জুনিয়র ডাক্তারদের উপস্থিতিতে এই কাণ্ড পুরোটা হয়েছে বলে দাবি। বারবার বলার পরেও কোন সিনিয়র ডাক্তারকে আসতে দেখা যায়নি বলে দাবি পরিবারের। সিনিয়র ডাক্তারদের অনুপস্থিতি এবং সম্পূর্ণ গাফিলতিতে এই কিশোর মারা গেছে বলে অভিযোগ করে বিক্ষোভ শুরু হয়।




মৃতের আত্মীয় রাজু বলেন-” এতক্ষণ হাসপাতাল চত্বরে কোন ডাক্তারকেই দেখা যাচ্ছিল না, যেই বিক্ষোভ শুরু হল প্রচুর পুলিশ হাজির হয়ে গেল। এতগুলো পুলিশ আসতে পারে একটা সিনিয়র ডাক্তার উপস্থিত হতে পারল না? পুরোপুরি ব্যর্থ মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চিকিৎসা পরিষেবা একেবারেই ভেঙে পড়েছে ।এখানে সিনিয়র ডাক্তাররা কেউই থাকে না। অবিলম্বে এমার্জেন্সিতে থাকা যে ডাক্তারেরা এই মৃত ঘোষণা করেছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত আমরা এই বডি পোস্টমর্টেম করতে দেবো না বা দেহ নিয়ে যাব না।” একই দাবি করেছেন খড়্গপুর থেকে আগত খড়্গপুরের ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার ফিদা হোসেন-এরও৷ ফিদা হোসেন জানান- “ সম্পুর্ন গাফিলতিতে হয়েছে এই ঘটনা ৷ আমি জেলা শাসক, পুলিশ সুপার ও মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগ করছি ৷ চরম গাফলতিতে কিশোরের মৃত্যু হয়েছে ৷”

ঘটনায় চরম উত্তেজনা তৈরি হলে বিশাল পুলিশবাহিনী ও আধিকারিকদের ছুটে আসতে হয়। টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে উত্তেজনা পর্ব চলে। দীর্ঘ চেষ্টার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয় পুলিশ। এই প্রসঙ্গে হাসপাতাল সুপার ডাক্তার জয়ন্ত রাউৎকে ফোন করা হলে তিনি জানান-” এই ধরনের ঘটনায় মৃতের পেশি সংকোচন এর ফলে অনেক সময় মুখ থেকে তরল পদার্থ বের হয়। সেটা দেখেই হয়তো পরিজনেরা ভেবেছিলেন রোগী বেঁচে রয়েছে। আদপে সেটা হয়নি। ওই কিশোরকে মৃত অবস্থাতেই আনা হয়েছিল।” এই ঘটনায় উত্তেজনা চরম থাকায় পরিবারের লোকজনের দাবী মতো ঘটনা তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালে আধিকারিকরা। তবে অন্যান্য বারের মত এবারও সিনিয়র চিকিৎসকদের মেদিনীপুর হাসপাতালে অনুপস্থিতি নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page