Medinipur : সমাজের সেরা পুরুষ’ সম্মানে সম্মানিত খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি দাঁতনের চন্দন
মেদিনীপুরঃ ‘সমাজের সেরা পুরুষ’ সম্মানে সম্মানিত হলেন খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগারের বন্দি চন্দন চন্দ। শুক্রবার কলকাতার আইসিসিআর হলে বন্দি চন্দন’কে ‘সমাজের সেরা পুরুষ’ সম্মানে সম্মানিত করেছে অল বেঙ্গল মেন’স ফোরাম। যা রীতিমতো চমকপ্রদ হয়েছে সমাজে বার্তার দেওয়ার জন্যা ৷ বিষয়টিকে জেনে ধন্যবাদ পর্যন্ত জানিয়েছেন কারা মন্ত্রীও৷ উল্লেখিত সংস্থার পক্ষ থেকে এবার সেরা পুরুষের সম্মানে সম্মানিত করা হয় সমাজের বিভিন্ন পেশার ২২ জন পুরুষকে। যে তালিকায় রয়েছেন, ফুটবলার গৌতম সরকার, চিকিৎসক কুনাল সরকার, শিল্পপতি প্রণব চন্দ্র, চিত্র পরিচালক রাজাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সিঙ্গল ফাদার অভিষেক পাল। এদের সঙ্গে ‘সেরা পুরুষ’-এর সম্মান পেয়েছেন জেল বন্দি চন্দন চন্দও।
অল বেঙ্গল মেন’স ফোরামের সভাপতি নন্দিনী ভট্টাচার্য বলেন, “ এবার ২০২৪ সালে আমরা তৃতীয় তম বর্ষে মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগারের বন্দি চন্দন চন্দ’কেও ‘সমাজের সেরা পুরুষ’-এর সম্মানে সম্মানিত করছি। আমরা শুধু শিল্পী, নায়ক, গায়ক নয়, সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষ খেলোয়াড়, চিকিৎসক, শিল্পপতি, খাদ্য প্রস্তুতকারক, বিক্রেতা থেকে সিঙ্গল ফাদার এমন ২২ জনকে ‘সমাজের সেরা পুরুষ’-এর সম্মানে সম্মানিত করছি। যেখানে প্রখ্যাত ফুটবলার গৌতম সরকার থেকে চিকিৎসক কুনাল সরকারও রয়েছেন। যাদেরকে এই সম্মানে সম্মানিত করা হচ্ছে সমাজে তাঁদের প্রত্যকের অবদান রয়েছে। মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগারের বন্দি চন্দন চন্দ’র অবদান উল্লেখ করার মতো”৷
জেলা সুত্রে জানা গিয়েছে- চন্দন সংশোধনাগারে থেকেও ছোট ছোট শিশুদের বিনে পারিশ্রমিকে অঙ্কন শিক্ষা দেন, প্রতিমা তৈরি ও বিক্রি করে এই অর্থ বন্দি কল্যান তহবিলে দিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে নানা ধরণের সামাজিক কাজকর্ম করে থাকেন। সেই জন্য বন্দি চন্দনকে এই ‘সমাজের সেরা পুরুষ’-এর সম্মানে সম্মানিত করার উদ্যোগ নিয়েছিল সংস্থাটি ৷
বন্দি চন্দনের এমন সম্মান পাওয়া প্রসঙ্গে রাজ্যের কারা দপ্তরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, “খুবই ভালো খবর। যারা বিভিন্ন কারনে সংশোধনাগারে রয়েছেন, আমরা চাই তাঁরা মূলস্রোতে ফিরুক। যারা মুক্ত সংশোধনাগারে রয়েছেন তাঁদের আচার, ব্যবহার দেখে কর্তপক্ষ তবেই তাঁদের মুক্ত সংশোধনাগারে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। যারা মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগারের বন্দি চন্দনকে এমন সম্মানে সম্মানিত করছেন, তারাও নিশ্চয়ই খোঁজ-খবর করে এমন সম্মান দিচ্ছেন। অবশ্যই এটা সাধুবাদ জানানোর মতো বিষয়।”
চন্দনের বাড়ি, পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন থানার সোনাকনিয়া এলাকায়। জানা গিয়েছে, ২০০০ সালের ১৯শে নভেম্বর চন্দনের বাড়িতে ‘অগ্নিশিশু ক্ষুদিরাম’ নাটকের রিহারস্যাল করতে এসে ‘শক্তিমান’ ধারাবাহিক দেখে নকল করতে গিয়ে কীভাবে মৃত্যু হয় এক নাবালকের! নাবালকের পরিবারের অভিযোগ, চন্দন তাঁদের ছেলেকে খুন করেছে! নাবালকের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পরদিন ২০ নভেম্বর পুলিশ চন্দনকে গ্রেপ্তার করে। চন্দনের পরিবারে তখন স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে বর্তমান। ৪ মাস ২৩ দিন জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান চন্দন। চলতে থাকে বিচার পর্ব। সাড়ে তিন বছর মুক্ত থাকার পর ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২০০৪ সালের ৩০শে জানুয়ারি ফের গ্রেপ্তার হন।
যাবজ্জীবন সাজা হয় চন্দনের। তারপর থেকে সংশোধনাগারে বন্দি। মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার, আলিপুর সংশোধনাগার সহ বিভিন্ন সংশোধনাগার ঘুরে ফিরে আসেন মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগারে। বন্দি দশাতেই ছবি আঁকা, নাটক যাত্রায় অভিনয় করা, প্রতিমা গড়া, করোনার সময় সচেতনতা মূলক মডেল তৈরি করার কাজ করেছেন। এখনও তিনি খড়্গপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় ছোট শিশুদের আঁকা শেখান। উপার্জিত অর্থের একটা অংশ বন্দি কল্যানে দিয়ে দেন। বন্দি অবস্থায় ৩ দিন থেকে ১১ মাস পর্যন্ত মোট ২৫ বার প্যারোলে ছাড়া পেয়েছেন চন্দন।
বন্দি চন্দন চন্দ বলেন, “বিচারে আমি খুনের আসামী। টানা কুড়ি বছর বন্দি আছি। সংশোধনাগার থেকে মুক্ত সংশোধনাগারে স্থান হয়েছে। অল বেঙ্গল মেন’স ফোরামের পক্ষ থেকে আমাকে এমন সম্মান দেওয়া হচ্ছে শুনে ভীষণ খুশি। উনারাও ফোন করেছিলেন। তারপর আমাদের কর্তৃপক্ষের তরেফে বিষ্যটি জানানো হয়। কলকাতায় এই সম্মান গ্রহণ করতে যাওয়ার জন্য কারা দপ্তর আমার ২৪ ঘন্টা ছুটিও অনুমোদন করেছেন। আমি ভীষণ খুশি। আমার মতো একজন জেলবন্দি মানুষকে এমন সম্মান দেওয়া হবে কখনও ভাবতে পারিনি”।