Abhisekh Banerjee: দাদা ধরে আর হবে না, সৎ মানুষ সেবক জন প্রতিনিধি হবেন, মঞ্চে উদাহরণ তুলে ধরে কেশপুরে বললেন অভিষেক ব্যানার্জী

আনন্দপুর: পশ্চিম মেদিনীপুরের
কেশপুর ব্লকের আনন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বৃহৎ সমাবেশ করলেন যুবনেতা অভিষেক
বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে
সুনির্দিষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ কতগুলো বার্তা রেখে গেলেন। যার মধ্যে দলের গোষ্ঠী কোন্দলকে
নিশানা
,
পঞ্চায়েতে প্রার্থী কারা হবেন, প্রচারের পথ
কি হবে-যেমন জানিয়ে দেন
, তেমনি বিরোধী বিজেপি ও সিপিআইএম
এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিকেও সমালোচনা করে কটাক্ষ করেন সমাবেশ থেকে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর ও
ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার মাঝে থাকা আনন্দপুরে সমাবেশ করা হয়েছিল। লক্ষাধিক মানুষকে
উপস্থিত করানোর লক্ষ্যে জেলা জুড়ে প্রায় ৮০০ বেসরকারি বাস ভাড়া করেছিল দল। চার
হাজারের বেশি ছোট গাড়ি ভাড়া করা হয়েছিল কর্মী নিয়ে যেতে। আয়োজনের বিশালতা
অনুযায়ী পুলিশও বিশাল নিরাপত্তার বহর তৈরি করেছিল। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে
পুলিশ এনে নিরাপত্তার বহর তৈরি করা হয়েছিল। ৩ হাজারের বেশি পুলিশ কর্মী এই কাজে
মোতায়েন ছিল বলে জানা গিয়েছে।

সমাবেশে উপস্থিতির আগেই চমক
অভিষেক ব্যানার্জির। আড়াইটের পর সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার আগেই রাস্তায় খড়গপুর
গ্রামীণের মাতকাতপুর এলাকার একটি গ্রামে নেমে পড়েন গাড়ি থেকে। গ্রামের লোকজন
কেমন আছেন তার খোঁজখবর নেন। ওই গ্রামের বাসিন্দারা জানান তারা সেচ দপ্তরের জমিতে
বহুদিন ধরে বসবাস করছে। তাই নিজেদের বাসস্থানের সুনির্দিষ্ট কাগজপত্র নেই
, নেই তাদের জন্য কোন স্কুল। অভিষেক ব্যানার্জি বেশ কিছুক্ষণ তাদের সঙ্গে
কথা বলে তাদের সমস্যা শুনে সমাধানের জন্য সরাসরি আধিকারিকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন
সেখানে। দ্রুত সমাধান হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই এলাকা ছাড়েন।

তক্ষণে সমাবেশ স্থলে
লক্ষের কাছাকাছি মানুষের উপস্থিতি হয়ে গিয়েছিল। শীতকাল হল প্রখর রৌদ্রে সেই মাঠে
কর্মী সমর্থকরা উপস্থিত হয়েছিলেন। দুপুর আড়াইটার কিছু পরে হাজির হন অভিষেক
ব্যানার্জি।

সমাবেশ স্থলে বিশাল জনসমাগম দেখে
অভিষেক ব্যানার্জি বলেন-” সংবাদ মাধ্যম বলে তৃণমূল গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরবার।
আজকের জন সমাবেশ তাদের কাছে একটা উত্তর। আমি এতদিন ধরে বিভিন্ন সমাবেশ করছি
, মনে হয় এটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সমাবেশ। যে আশীর্বাদে আপনারা আমায় আবদ্ধ
করলেন
, কথা দিয়ে যাচ্ছি এই আশীর্বাদের ঋণ সুদ সমেত
উন্নয়নের মাধ্যমে আগামী দিনে আমি ফেরত দেব। আমি এক কথার ছেলে। যা বলি তাই
করি।”

বিরোধীদের উদ্দেশ্যে সমাবেশ থেকে
তিনি বলেন-“সিপিআইএমের হারমাদরা এখন বিজেপির জল্লাদ হয়েছে। লাল জমা পরিবর্তন
করে পুরনো সন্ত্রাস আনতে মানুষের কাছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভ্রান্ত করছে। আরো এক
দল রয়েছে যারা ভাবছেন নির্বাচনের সময় এক কাজ করবো
, পরে জামা পাল্টে
তৃণমূলে গিয়ে তৃণমূলের চোখে ধুলো দিয়ে আমার স্বার্থ চরিতার্থ করবো
, তারা মনে রাখবেন সবার উপরে একটা অদৃশ্য চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে। নজর আমি
রাখছি। তিন-চারটে নেতার রেষারেষিতে যদি দলের মাথা নত হয়
, আমি
ছেড়ে কথা বলবো না
, হুঁশিয়ারি দিয়ে গেলাম। সময় দিচ্ছি
শুধরে যান। না হলে যে ওষুধ দেবো কাজ শুরু হয়ে গেলে শোধরানোর সুযোগ পাবেন
না।”

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে
প্রার্থী নির্বাচন করা প্রসঙ্গে কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন -” এখন থেকেই
অনেকে বলছেন পঞ্চায়েতে আমি প্রার্থী। পঞ্চায়েতের প্রার্থী জেলা ব্লক অঞ্চল
সভাপতি দেবেনা
, দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষ যেভাবে তৃণমূলকে দেখতে
চায় সেভাবে তৃণমূলকে তৈরি করতে আমরা বদ্ধপরিকর। যা ২০১১ এর সময় মানুষ দেখে
সিপিএমকে পরিবর্তন করেছিল। মানুষ যাকে সার্টিফিকেট দেবে সেই তৃণমূলের প্রার্থী
হবে। অন্য কেউ হবে না
, কারণ পাহারাদারের নাম অভিষেক
ব্যানার্জি।”

কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপির
সমালোচনা করে তিনি বলেন-“বাংলায় জিততে পারেনি বলে ১৭ লক্ষ পরিবারের করা
কাজের টাকা তারা আটকে রেখেছে। এর জবাব আপনারা নির্বাচনে চাইবেন।”

আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন
প্রসঙ্গে অভিষেক ব্যানার্জি বলেন-“আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন শান্তিপূর্ণ
করাবোই। বিরোধীরা এখন থেকেই বলছে আমাদের মনোনয়ন করতে দেবে না। সিপিআইএম ও
বিজেপিকে বলবো একে অপরের জড়াজড়ি না করে নিজে নিজে লড়ুন। আমার নাম্বার এখানে
দিয়ে গেলাম
, সিপিএমের হার্মাদ, বিজেপির
জল্লাদ
, কংগ্রেসের উন্মাদরা মনোনয়ন না দিতে পারলে আমাকে ফোন
করুন আমি এসে ব্যবস্থা করে দেব। করানোর দায়িত্ব আমার
, কিন্তু
প্রার্থী তৈরি করার দায়িত্বটা এখন থেকেই নিজেরা তৈরি করুন। বাংলায় ৭০ হাজার
প্রার্থী লাগবে
, আছে তো আপনাদের? “

অভিষেক ব্যানার্জি এদিন আবাস
যোজনার বাড়ি পেয়েও সততার সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করা এক গরিব ব্যক্তিকে মঞ্চে
তুলে ধরে মানুষের সামনে উদাহরণ হিসেবে দেখান। লেখছে তার পুরনো ভাঙ্গা বাড়ির ছবিও
দেখান। তিনি বলেন-” ব্লক অফিস থেকে তাঁকে বাড়ি দেওয়া হবে বলে জানালেও তিনি
তা প্রত্যাখ্যান করে দেন। তিনি উচাহারের বাসিন্দা শেখ হোসেনউদ্দিন। সমান্য ঔষধ
দোকানের এই কর্মী। এই বাড়ি নিলে আরো বেশি পয়সা খরচ হবে মনে করে তিনি
প্রত্যাখ্যান করেছেন। সত্যি সৎ উনি
, উনার মেয়ের বিয়ের জন্য
উনি টাকা জমাচ্ছেন। আমি ওনার মেয়ের বিয়ের দায়িত্ব নিলাম।এই ধরনের লোক সামনের
দিনে আমাদের পঞ্চায়েতের প্রার্থী। প্রার্থী হয়ে কামানোর দিন শেষ।” একইভাবে
কেশপুরের গোলাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য মঞ্জু দলবেরা ও তার স্বামী স্থানীয়
তৃণমূলের বুথ সভাপতি অভিজিৎ দলবেরা কে সম্মানিত করেন সততার জন্য। নিজেদের ভাঙ্গা
বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাস যোজনার বাড়ি পেয়েও তারা প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছিলেন।

তিনি আরো বলেন-” মানুষ ভোট
দিয়ে আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন
, আমরা তাদের জন্য কাজ করবো। ধর্মের
গল্প শোনাবো না
, ধর্মচর্চা করতে হলে মন্দির মসজিদ
গুরুদুয়ারাতে যাব।”




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page