বন্যপ্রাণ শিকার ‘প্রতিরোধে’ ময়দানে বনদপ্তর, বন পরিচালন কমিটিগুলিকে নিয়ে আলোচনা সভা

বন্যপ্রাণ শিকার আটকাতে সচেতনতার পাশাপাশি জঙ্গলে বাধা দিবে যৌথ বন পরিচালন কমিটিগুলি। তারই আলোচনা সভা হল মঙ্গলবার বিকেলে। মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাঁঞ্জাশোল আইসিডিএস স্কুলে বন কমিটিগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসে বন দফতর ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওয়াইল্ড এণ্ড আদার লিভস ফাউন্ডেশন (WOLF)। উপস্থিত ছিলেন গোপগড় বিট অফিসার বাদল রজ্জক সহ অন্যান্য বনকর্মীরা। অরণ্যে বন্যপ্রাণের রক্তক্ষরণ আটকাতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে কমিটি। বসন্ত বা প্রাক্ গ্রীষ্মে জঙ্গলমহল জুড়ে আদিবাসী- বনবাসী মানুষদের পুরানো রীতি হিসেবে বন্যপ্রাণ শিকারের রেওয়াজ আজও বর্তমান। আধুনিক যুগে খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য কৃষির উন্নতি ঘটলেও ভুলতে পারেনি আদিম পশু শিকারের প্রবৃত্তি। লোহার তৈরি বর্শা, তীর, ধনুক ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে অরণ্যের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে আজও চলছে শিকার। সেই শিকার বন্ধে মেদিনীপুর সদর জুড়ে পোস্টার, মাইকিং-এর পাশাপাশি বন কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠক করে বন দফতর। বন দফতর ও পুলিশ শিকারিদের আটকানোর চেষ্টা করলেও ফাঁক গলে জঙ্গলে প্রবেশ করে শিকারিরা। তাদের আটকাতে জঙ্গলে পাহারায় থাকবে কমিটির সদস্যরা। 

আগামী ২০ চৈত্র মেদিনীপুর রেঞ্জের জামশোলে রয়েছে শিকার। যৌথ বন পরিচালন কমিটির সম্পাদক মদন মাঝি বলেন, “বন ও বন্যপ্রাণ আমাদের জাতীয় সম্পদ। একে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। ওই শিকারে লালগড় ঝাড়গ্রাম, গোপীল্লভপুর, চন্দ্রকোণা, গড়বেতা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শিকারিরা আসে। জঙ্গলে প্রবেশ করে অনেক জীবজন্তু মেরে ফেলে। বন্যপ্রাণ হত্যা আটকাতে ওই দিন কমিটির সদস্যরাও পাহারায় থাকবেন জঙ্গলে। সেই বিষয়েই আলোচনা হয়েছে দিন।” বন্যপ্রাণ শিকার আটকাতে সচেতনতার উপর জোর দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওয়াইল্ড এণ্ড আদার লিভস্ ফাউন্ডেশন। সংগঠনের পক্ষ থেকে দেবরাজ চক্রবর্তী বলেন, “মূলত সচেতনতার উপরই জোর দিতে হবে। জঙ্গলে আগুন লাগানো বা বন্যপ্রাণ শিকার আটকাতে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে প্রচার বেশি করতে হবে। তবেই একদিন সফলতা মিলবে।” জানা গিয়েছে, কমিটির প্রতিটি সদস্য ও সদস্যারা শিকারের দিন জঙ্গলে থাকবেন। কোনোভাবে একটিও বন্যপ্রাণ হত্যা যাতে না হয় তার জন্য জোর নজরদারি চলবে। শিকারিদের সচেতনতার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি জানানো হবে বন্যপ্রাণ হত্যা ও জঙ্গলে আগুন লাগালে আইন অনুযায়ী কি শাস্তি হতে পারে। শিকার কার্যে ব্যবহৃত যানবাহন, মোটর সাইকেল, অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হবে। মেদিনীপুর রেঞ্জের আধিকারিক শান্তনু কুলভি বলেন, মাইকিং, আলোচনা সভা করে মানুষজনকে সচেতন করা হচ্ছে বন্যপ্রাণ হত্যা থেকে বিরত থাকার জন্য। শিকারের দিন জঙ্গলে চলবে টহল। বিভিন্ন পথে নাকা পয়েন্ট বসানো হবে। রেল দপ্তর ও পুলিশকেও জানানো হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page