শিশুমনে পরিবেশ প্রেমের বীজ বপণে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে সচেতনতা শিবির বনদপ্তরের
কোথাও অসচেতনতা। আবার কোথাও চোরাশিকারিদের দাপট। দিকে দিকে হত্যা হচ্ছে বন্যপ্রাণ। বিলুপ্তির পথে একাধিক প্রজাতির পশু-পাখি। নিধন হচ্ছে বৃক্ষ। একরের পর একর জঙ্গলে কেউ বা কারা লাগিয়ে দিচ্ছে আগুন। পরিবেশের ভারসাম্য বাঁচাতে প্রয়োজন বন ও বন্যপ্রাণ রক্ষা। তাই ছোট ছোট অপরিপূর্ণ মনগুলোকে পরিবেশ রক্ষার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। সেই উদ্যোগ নিল মেদিনীপুর বন বিভাগ। শুরু হয়েছে বিভিন্ন বিদ্যালয়গুলিতে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বন ও বন্যপ্রাণ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা। বন্যপ্রাণ হত্যা, বৃক্ষ নিধন হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে কতটা ক্ষতি হতে পারে সেই বিষয়গুলিও আলোচনা করা হয়। বন্যপ্রাণীদের উত্ত্যক্ত করলে কি ক্ষতি হতে পারে সেই সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া হয় তাদের। এমনই একাধিক বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর সদর ব্লকের জঙ্গল লাগোয়া চাঁদাবিলা, বাঘঘরা সহ বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে গিয়ে আলোচনা শিবির করলো চাঁদড়া ও মেদিনীপুর রেঞ্জের বনকর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন রেঞ্জের আধিকারিকও। তবে বছরের বিশেষ সময়গুলিতে নয়, সারাবছর ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে যদি বনদপ্তরের তরফে পরিবেশ সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা হয় তাহলে জনমানসে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। তারা জানাচ্ছেন, শিশু শিক্ষার্থীরা আমাদের ভবিষ্যৎ নাগরিক। তাদের সচেতন করতে হবে, আগ্রহী করে তুলতে হবে। বিদ্যালয়ের সিলেবাসে বন্যপ্রাণ রক্ষা সংক্রান্ত আইনকানুন, জঙ্গলে আগুন লাগানো ইত্যাদি স্থানীয় বিষয়গুলিকে গুরুত্ব সহ বিশদে তুলে ধরা প্রয়োজন। শিক্ষাদপ্তর ও সিলেবাস কমিটির ভাবা প্রয়োজন আজকের দিনে পরিবেশ বা প্রকৃতি শুধুমাত্র ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে পরিগণিত হতে পারে না।
বসন্ত বা প্রাক গ্রীষ্মে জঙ্গলমহল জুড়ে চলে বন্যপ্রাণ শিকার। পাশাপাশি জঙ্গলে ঝরা পাতায় আগুন লাগানোর চিত্র দেখা যায়। যা আইন বিরোধী। বন্য পশু পাখি হত্যা করলে বা জঙ্গলে আগুন লাগালে ভারতীয় বন্যপ্রাণ আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। বন্যপ্রাণ হত্যা না করে সংরক্ষণের প্রয়োজন। বন ও বন্যপ্রাণ না বাঁচলে মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। তারই সচেতনতার লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিবির করল বন দফতর। যৌথ বন পরিচালন কমিটিগুলির পাশাপাশি স্কুলস্তরে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এখন থেকেই সচেতনতার বীজ রোপন করা গেলে ভবিষ্যতে বন্যপ্রাণ শিকার, জঙ্গলে আগুন লাগানোর ঘটনায় ছেদ পড়বে বলে মনে করছেন শিক্ষকদের একাংশ। ওই আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। অরণ্য সংরক্ষণ, বন্য পশু পাখি পরিচিতি এবং এদের শিকার বা হত্যা না করে সংরক্ষণের নানা বিষয় সেখানে তুলে ধরা হয়েছে। ধেড়ুয়া বিট অফিসের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সৈকত বিশ্বাস বলেন, “পরিবেশ রক্ষা ও বন্যপ্রাণ হত্যা বন্ধ করতে এলাকার শিশুমনেই পরিবেশ প্রেমের বীজ বপণের চেষ্টা। তাতে আগামী ভবিষ্যৎ সুন্দর হয়ে উঠবে।”