বনকর্মীদের মৃত্যুতে মেলেনি চাকরি, বাঘ মৃত্যুর ঘটনাস্থলে শ্রদ্ধা জানালেন গ্রামবাসীরা
হাতির হানায় মৃত্যুতে মিলছে চাকরি। কিন্তু বাঘের ওপর নজরদারি রাখতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল দুই বনকর্মীর। তার ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও চাকরি পাননি। তাতে হতাশ পরিবারের লোকজন। পাশাপাশি গত ১৩ এপ্রিল ২০১৮ সালে মেদিনীপুর সদরের চাঁদড়া রেঞ্জের বাঘঘরার জঙ্গলে ‘খুন’ হতে হয়েছিল রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে। সেই দিনটিকে স্মরণ করে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন গ্রামবাসীরা। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রথম বাঘের উপস্থিতির খবর শোনা যায় শালবনীর মধুপুর এলাকায়। জঙ্গলে চরতে যাওয়া কয়েকটি গরু কোন অজানা প্রানীর আক্রমণে আহত হয়। এই ঘটনা বাঘের দ্বারা বলে প্রচার শুরু হয়ে যায়। অনেকে আবার নেকড়ে বা হায়না হতে পারে বলে সন্দেহ করেন। পরে বিভিন্ন এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়ার খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তেই আতঙ্ক। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ লালগড়ের জঙ্গলে বসানো হয় সাতটি ট্র্যাপ ক্যামেরা। ২ মার্চ লালগড়ের মেলখেড়িয়ার জঙ্গলে বসানো একটি ক্যামেরায় ধরা পড়ে বাঘের ছবি। তারপরই এলাকায় বাঘ দেখার একদিকে উৎসাহ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আতঙ্কও বাড়ে মানুষের মধ্যে। ৩ মার্চ বাঘ ধরার জন্য সুন্দরবন থেকে নিয়ে আসা হয় খাঁচা ও বিশেষজ্ঞ টিম। যেখানে বাঘের ছবি ধরা পড়ে তার আশেপাশে ছাগলের টোপ দিয়ে বসানো হয় খাঁচা। খাঁচার কাছ থেকে বাঘ ফিরে গেলেও ধরা দেয়নি ছাগলের ফাঁদে। তারপর থেকে বিভিন্ন এলাকায় মিলতে শুরু করে বাঘের পায়ের ছাপ। এমনকি মেদিনীপুর শহরের কাছে মুড়কাটার জঙ্গলেও মেলে পায়ের ছাপ। ৮ ই মার্চ সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে বাঘের খোঁজে আকাশে উড়ানো হল ড্রোন ক্যামেরা। দেখা মিলল না মহারাজের। ১৩ মার্চ বাঘের উপর নজরদারি রাখতে গিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় ঐরাবত গাড়ির ভেতরে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় অমল চক্রবর্তী ও দামোদর মুর্ম্মু নামে দুই বনকর্মী। এই দুই বনকর্মী পরিবারের আক্ষেপ, হাতির হানায় মৃত্যুতে চাকরি মিললেও বাঘের ওপর নজরদারি রাখতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো চাকরি পাননি। একাধিক দপ্তর, এমনকি নবান্ন পর্যন্ত ছুটেছেন। পরিবারের দাবি, তৎকালীন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ওই দুই বনকর্মীর পরিবারে চাকরি দেওয়ার বিষয়ে। তারপর থেকে বর্তমান বনমন্ত্রী, নবান্ন একাধিক দপ্তরে গিয়েও সুরাহা হয়নি। অসহায় অবস্থায় দিন কাটছে পরিবারগুলির। তবে সেইসময় সবরকম চেষ্টা করেও বাঘ ধরতে ব্যর্থ হয় বনদপ্তর! ৩০ মার্চ মেদিনীপুর বনবিভাগের চাঁদড়া রেঞ্জের বাঘঘরার জঙ্গলে একটি সিমেন্টের সেচ পাইপের ভেতরে বাঘ থাকার খবর পেয়ে জাল দিয়ে ঘিরে ফেলেন বনকর্মীরা। কিন্তু বাঘ বেরিয়ে এসে গর্জন দিতেই জাল ফেলে দৌড় লাগালো বনকর্মীরা। তারপরই ১৩ এপ্রিল বাঘঘরার জঙ্গলে শিকারিদের বল্লামের খোঁচায় প্রাণ হারালো বাঘটি। বনদপ্তরের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। ৬ বছর অতিক্রান্ত হলো বাঘের মৃত্যু। সেই দিনটিকে স্মরণ করে শনিবার বাঘ মৃত্যুর ঘটনাস্থলে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান গ্রামবাসীরা। আফসোসও করেন তারা।