মিশন সফল! ৪ দিনে হাতিকে ছত্রিশগড়ে পাঠিয়ে বাড়ির পথে খড়্গপুরের হুলা টিম
জেলা ও রাজ্য ছাড়িয়ে হাতি তাড়াতে ডাক পড়েছিল সুদূর মধ্যপ্রদেশে। সমতলে হাতি তাড়ানোয় দক্ষ হুলা টিম কতটা সফল হবে পাহাড়ি এলাকায় তা নিয়ে সংশয় ছিল নিজেদের মধ্যেই। দুর্গম পথ, নতুন এলাকা। নিজেদের মুখ রক্ষা করতে পারবে কিনা তা নিয়েও নিজেদের মধ্যে গুঞ্জন ছিল। কারণ এর আগে কর্ণাটক থেকে হুলা টিম এসে হাতি সরাতে না পেরে ফিরে গিয়েছে। তারপরেই ডাক পড়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুন্ডার বাপি মাহাত, আকাশ মাহাত, বাবলু মাহাত, মথুর মাহাতদের। মধ্যপ্রদেশের অনুপপুর বন বিভাগের জাইথারি রেঞ্জ এলাকায় দুটি হাতির তাণ্ডবে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল গ্রামবাসীদের। আতঙ্কের মধ্যে বাড়ির ছাদে ত্রিপল খাটিয়ে তারা রাত্রিযাপন করছিল। বনদপ্তরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখিয়ে, আবেদন জানিও সুরাহা হয়নি। অবশেষে অনুপপুর বনবিভাগের পক্ষ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের এক বন আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই আধিকারিক কলাইকুন্ডার হুলা টিমের নেতা বিকাশ মাহাত’র সঙ্গে কথা বলে দেন। পাশাপাশি গ্রাম মিলিয়ে ১৪ জনের একটি টিম গত শনিবার মধ্যপ্রদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রবিবার পৌঁছে এলাকা ঘুরে দেখেন হুলা টিমের সদস্যরা। তাদের এক সদস্য আকাশ মাহাত বলেন, “আমরা সমতল এলাকায় হাতি তাড়াতে অভ্যস্ত। এখানে পাহাড় এবং খাদে কিভাবে পারব হাতিকে সরাতে তা নিয়ে সংশয় ছিল।” তবে শেষ পর্যন্ত চারদিনে হাতি দুটিকে মধ্যপ্রদেশ ছাড়িয়ে ছত্তিশগড় পাঠাতে সক্ষম হয় খড়্গপুরের হুলা টিম। এতে খুশি, বনাধিকারী থেকে হুলা টিমের সদস্যরাও। তবে এই কাজে জাইথারি রেঞ্জ আধিকারিক সহ কর্মীরা সব সময় তাদের সঙ্গে ছিল বলেই সফল হয়েছে। পথনির্দেশ, ড্রোনের মাধ্যমে হাতির অবস্থানও তাদের জানিয়ে দিচ্ছিলেন প্রতিমুহূর্তে। বুধবার সকাল থেকে হাতি দুটিকে দীর্ঘ পথ পার করে পাহাড়ে তুলে দিয়েছিল হুলা টিম। এর আগেও হাতিকে পাহাড়ে তুলে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে আবার ফেরত আসত। যে কারণে হুলা টিমের সদস্যদের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রেখে দিয়েছিল। বনদপ্তর ড্রোনের মাধ্যমে হাতির অবস্থান দেখে নিশ্চিত হয় ছত্তিশগড় পৌঁছে গিয়েছে। এই কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে তাদের মিলেছে ৫৬ হাজার টাকা। সঙ্গে খাওয়া, থাকা, যাতায়াত ভাড়া সমস্ত কিছু। হুলা টিমের নেতা বাপি মাহাত বলেন, “প্রথমে আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম পাহাড় এলাকায় হাতি সরাতে পারব কিনা। অবশেষে জয় মিলেছে আমাদের। হাতি ছত্তিশগড় চলে গিয়েছে। আপাতত এখন ৩-৪ মাস আর ফেরত আসবে না। পরে আবার যদি প্রয়োজন হয় আমাদের ডেকে পাঠাবে বলে জানানো হয়েছে। বনদপ্তর সর্বদা আমাদের পাশে থেকেছেন পথনির্দেশ সহ হাতির অবস্থান জানানোর জন্য। বৃহস্পতিবার রাতে ট্রেনে উঠব বাড়ি ফেরার জন্য।”