খড়্গপুর: মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরে হাজির ছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ৷ দলের কর্মসুচি নিয়ে বের হওয়ার আগে নিত্যদিনের মতো খড়্গপুরের বোগদা এলাকাতে বেরিয়েছিলেন চা চক্রে ৷ সেখানে সাংবাদিকদের সামনে ফের নাম উল্লেখ না করে শুভেন্দু অধিকারী সহ একদল নেতাকে ধুয়ে দিলেন পুনরায় ৷ সাংবাদিকদের সামনে দিলেন নানা উত্তর ৷ সম্প্রতি হওয়া বিতর্কিত ইস্যুতে তিনি বলেন-“দিলীপ ঘোষ দলকে জিজ্ঞাসা করে কি পায়খানা পেচ্ছাব করতে যাবে ? পার্টিতে নতুন আসা বাজনদারদের বেশি চিন্তা, কে ঠিকা দিয়েছে? তারা বিজেপির নীতি ঠিক করে দিচ্ছেন। পলিসি ঠিক করে দিচ্ছেন। বিজেপি হিন্দু কি মুসলমান কি মন্দির কি মসজিদ ঠিক করে দিচ্ছেন। কে ভাই তোমাদের ঠিকা দিয়েছে? তোমরা হচ্ছে আজকে বাজনদার। কারো না কারো হয়ে বাজাচ্ছো, বাজাও !”
বিএসএফ গুলি না চালালে হত্যার ঘটনা ঘটতো না মুর্শিদাবাদে, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য নিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন-” মুখ্যমন্ত্রীর যদি দম থাকে তাহলে মুর্শিদাবাদে যে দাঙ্গা হত্যা হয়েছে তার তদন্ত করান কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে। এবং বিএসএফ কি করেছে সেটাও তদন্ত চান। উনি চাইলেই হবে। এতদিন পরে উনি কেন গেছেন? সমস্ত প্রমাণ মিটে যাওয়ার পর ও সাফসূত্র করে দেওয়ার পর উনি কেন যাচ্ছেন? এ ধরনের মিথ্যা কথা অনেক আগেও বলেছেন আবার বলছেন। ওখানকার সাধারণ মানুষ জানে তাদের উপরে কি হয়েছে।”
শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন মুর্শিদাবাদে দাঙ্গা কারীদের প্রশ্রয় দেন মুখ্যমন্ত্রী-সে প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন-” মুখ্যমন্ত্রীর সব দিনে দাঙ্গাকারী ও জেহাদীদের পক্ষে থাকেন সেটা আমরা বুঝি। আমরা দেখলাম যখন দাঙ্গার পরে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে না দাঁড়িয়ে ইমামদের ডেকে উনি সভা করলেন। এগুলো কাজটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার জিহাদী লোকজনদের দিয়ে করিয়েছেন। ঘটনার যদি সত্যতা জানতে চান তাহলে সিবিআই তদন্ত চান। আরজিকরের সত্য ঘটনা যেমন চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তেমনি মুর্শিদাবাদের ঘটনাও চাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। উনি ভয় পাচ্ছেন, সত্য সামনে এলে ওনার দলের নেতাদের নাম চলে আসবে।”
মঙ্গলবার বঙ্গ বিজেপি বৈঠকে বসছে কেন্দ্রীয় কমিটির লোকজনদের নিয়ে। সেখানে দিলীপ ঘোষ থাকছেন কিনা সেই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে দিলীপ ঘোষ বলেন ” আমি কোন কমিটির মধ্যে নেই। আমি আছি কোর কমিটিতে। সেই কোর কমিটির দু-চার মাসে যখন বৈঠক হয় আমাকে ডাকা হয়। বাকি কমিটি যে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ বলা হয়, যেটার জন্য আমাকে যোগ্য মনে করে বলে আমি সেটা করি।”
বড়বাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর স্থানীয় রুপটফ রেস্টুরেন্ট বন্ধের উদ্যোগ পৌর প্রশাসনের, এ প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন-” ওই রেস্তোরাঁ তৈরি যদি অন্যায় তাহলে তৈরি হতে দেওয়া হল কেন? আর যদি একটা রুপ টপ রেস্তোরাতে গন্ডগোল থেকে থাকে আপনি সব বন্ধ করে দেবেন? ওটা তো একটা বিজনেস, মানুষ খরচ করে তৈরি করেছে। অনুমতি নিয়ে করেছে, আর যদি অনুমতি না নিয়ে থাকে তাহলে তখন আটকানো হয়নি কেন। ওই রেস্তোরা ছাড়াও বড়বাজার সহ আরো অন্য জায়গায় বহুবার আগুন লেগেছে, সেখানে তাহলে কেন লাগলো? আসলে অনুমতি ছাড়াই ঘুষ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তাই এই গন্ডগোল।”
বঙ্গ বিজেপির গন্ডগোল নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশ এসেছে সম্প্রতি। দিলীপ ঘোষ বলেন-“কিসের দ্বন্দ্ব চলছে?কোন ব্যাপারে বিজেপি নেতারা একমত নন। আর দলের কোন নির্দেশিকা নেই। কে মন্দিরে যাবে, মসজিদে যাবে, ইফতার করবে, বিজেপি কোনদিন বলে দেয় না। বিজেপির গণতন্ত্র আছে। বিজেপি ভারতের সংবিধান মেনে করে। যারা এটা প্রচার করছে ভুল প্রচার করছে। আমি বলে দিচ্ছি-কিছু ব্যাপারে আমাদের দ্বিমত আছে। সেদিন অক্ষয় তৃতীয়ায় বিভিন্ন লোক বিভিন্ন প্রোগ্রাম করেছে। কোনটাই পার্টিকে জিজ্ঞেস করে কেউ করেনি। আমি চ্যালেঞ্জ করছি। দিলীপ ঘোষ কি পার্টিকে জিজ্ঞেস করে পায়খানা পেচ্ছাপ করতে যাবে? আমি গেছি নেমন্তন্ন রক্ষা করতে। আজ যারা খুব বগল বাজাচ্ছেন বা কষ্ট পাচ্ছেন , কোন চিন্তা করবেন না এটা বিজেপি। বিজেপির মধ্যে গুলি চলেছে কি নেতায় নেতায়? কুনাল ঘোষ একজনকে ধুয়ে দিচ্ছে, আমাদের এখানে কেউ তার মত প্রকাশ করেছে। সেটা অনেকের ভালো লাগেনি। আমি বলছি ভালো হয়নি পার্টি দেখবে। বিজেপি হচ্ছে সমুদ্রের মতো। মাঝেমধ্যে এরকম ঢেউ ওঠে। আবার সেই ঢেউ সমুদ্রেই বিলীন হয়ে যায়। তৃণমূল বা কারই লাফালাফি করার দরকার নেই ঝগড়া বাধিয়ে দেওয়ার জন্য। পার্টিতে যারা নতুন নেতা এসেছে তাদের ঘাবড়াবার দরকার নেই। সবথেকে বেশি চিন্তা হচ্ছে কিছু বাজনদার আছে পার্টির। তারা চিন্তিত, তারা বিজেপির নীতি ঠিক করে দিচ্ছেন। পলিসি ঠিক করে দিচ্ছেন। বিজেপি হিন্দু কি মুসলমান কি মন্দির কি মসজিদ ঠিক করে দিচ্ছেন। কে ভাই তোমাদের ঠিকা দিয়েছে? তোমরা হচ্ছ আজকের বাজনদার। কারো না কারো হয়ে বাজাচ্ছো, বাজাও ! এই ইউটিউব এই মিডিয়া ২০১৯ সালের আগে কোথায় ছিল? এসব কারো কিছু লাগেনি। নেতাই ছিল না, সাধারণ কর্মী সাধারণ মানুষ বিজেপিকে আশীর্বাদ করে বিরোধী দল করেছে। ৪১ শতাংশ ভোট দিয়েছিল। কোন মিডিয়া কোন নেতা ছিল না আমাদের বড় তখন। সমস্ত মিডিয়া এখন বিজেপির পক্ষে কারণ বিজেপি সাধারণ মানুষের কাজ করছে। তাই টেনশন নেবেন না, বগল বাজাবেন না। বিজেপির লোকেরা বিজেপিতেই আছে।”