দশবছর ধরে বন্যপ্রাণ রক্ষার্থে বট ও অশ্বত্থ লাগাচ্ছেন বৃদ্ধ সুভাষ, কুর্নিশ বনাধিকারিকদের

মেদিনীপুর: যে কোনো গাছ নয়, শুধুমাত্র বট, অশ্বত্থের গাছ লাগানো ও চারা বিলি করে যাচ্ছেন বছর ৬৫ এর সুভাষ মাহাত। ১০ বছর ধরে এই কর্মকাণ্ডে যুক্ত তিনি। সুভাষ বাবু একজন অবসরপ্রাপ্ত বনকর্মী। বাড়ি মেদিনীপুর সদর ব্লকের খড়িকাশুলি গ্রামে। ২০১৮ সালে অবসর নেন কর্মজীবন থেকে। তার আগে থেকেই তাঁর গাছের প্রতি ভালোবাসা লক্ষ্য করেছেন এলাকাবাসী। ছোট গাছ কেউ কাটলে বা গাছের ছাল তুললে তিনি খুব রেগে যেতেন। কখনো পাড়ার স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে মাদল বাজিয়ে জঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা দিতেন বট চারা লাগানোর জন্য। কখনো সেই চারা নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হতেন ওই পড়ুয়াদের নিয়ে। 
তিনি বলেন, “এখন থেকেই ছোটদের মধ্যে গাছের প্রতি ভালোবাসার জন্ম দিতে হবে।” শুধু বট, অশ্বত্থ কেন? সুভাষ মাহাত বলেন, “যেকোনো ধরনের গাছ লাগানো হলেও পরিবেশে পাখি বাঁচাতে গাছের চারা খুবই কম লাগানো হয়। পাখি বাদেও হাতিদেরও খুব প্রিয় খাবার বট, অশ্বত্থ। তাই এই কাজটা আমি করি। ১০ বছর ধরে প্রায় চার হাজার চারা বিলি ও লাগিয়েছি। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন এসে চারা নিয়ে গিয়েছেন।” 
তবে বট, অশ্বত্থের চারা তৈরি সহজ কাজ নয়। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সেই চারা সংগ্রহ করেন তিনি। পরে চারাগুলিকে ভাঙ্গা প্লাস্টিকের বালতিতে লাগিয়ে খানিকটা বড় করে তোলেন। এবার বিভিন্ন জনকে তিনি বিতরণ করেন বিনামূল্যে। এতে যেমন পরিবেশ বাঁচবে তেমনি গাছের ফল খেয়ে পাখি বাঁচবে, এই কথায় বোঝান এলাকাবাসীদের।
 তাঁর এই পরিবেশ প্রেম ও গাছের প্রতি ভালোবাসা দেখে তাঁকে সংবর্ধনা দিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ফেডারেশনের (অরণ্য শাখা) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাখা। বুধবার গোপগড়ে বনমহোৎসব উপলক্ষ্যে কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য বনপাল অশোক প্রতাপ সিংহ, মেদিনীপুর বনবিভাগের ডিএফও দীপক এম, খড়্গপুরের ডিএফও শিবানন্দ রাম সহ অন্যান্য আধিকারিক ও বনকর্মীরা। ওই কর্মসূচীতে সুভাষ বাবুকে পুষ্পস্তবক দিয়ে সংবর্ধনা জানালেন মুখ্য বনপাল। সুভাষ বাবু বলেন, “এই সংবর্ধনা আরও বেশি করে এই কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহ দিল।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page